SLST Dharna

‘জীবনটা এ বার হয়তো বেঁচে যাবে’! মাথা কামিয়ে ফেলা রাসমণির দিকেও নজর ছিল সোম-বৈঠকে

১০০০ দিন পথেই কেটেছে। তবু নবম-দশম শ্রেণির চাকরি মেলেনি। শনিবার ধর্মতলার সেই ধর্নার ১০০০-তম দিনে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন রাসমণিও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৫৮
Share:

রাসমণি পাত্র। — ফাইল চিত্র।

মুণ্ডিত মস্তক। কপালের ঠিক মাঝখানে সিঁদুর। নীচে ছোট্ট একটা টিপ। চোখে চশমা। পরনে শাড়ি। সকালে ধর্মতলার ধর্নামঞ্চে, তার পর বিকাশ ভবনে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠক— যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই নজর কেড়েছেন রাসমণি পাত্র। শিক্ষিকার চাকরির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভের ১,০০০তম দিনে প্রতিবাদ জানিয়ে মাথা কামিয়েছিলেন তিনি। ধর্মতলায় কাঁদো কাঁদো হয়ে বলেছিলেন, ‘‘কেউ শুনতে পাচ্ছেন? আমাদের চাকরি দিন!’’ সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সেই রাসমণির গলাতেই ঝরে পড়ল খুশি। সে কথা স্পষ্ট জানিয়ে তিনি বললেন, ‘‘জীবনটা এ বার হয়তো বেঁচে যাবে।’’

Advertisement

১০০০ দিন পথেই কেটেছে। তবু নবম-দশম শ্রেণির চাকরি মেলেনি। শনিবার ধর্মতলার সেই ধর্নার ১০০০-তম দিনে মাথা মুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান কয়েক জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কোলাঘাটের রাসমণিও। এক চাকরিপ্রার্থী প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আর কী কী ভাবে প্রতিবাদ করলে আমরা চাকরি পাব?’’

এর পরেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের হস্তক্ষেপে এসএলএসটি প্রার্থীদের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন ব্রাত্য। দ্রুত এই আইনি জটিলতা কাটার আশ্বাস দেন। বৈঠকে ব্রাত্যের ডান দিকে বসেছিলেন আন্দোলনকারীরা। বাঁ দিকে বিকাশ ভবনের আধিকারিকেরা ছিলেন। আন্দোলনকারীদের মাঝেই বসে ছিলেন রাসমণি, যিনি বার বার ধরা পড়েছেন সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরায়। বৈঠকের পর ব্রাত্য সাংবাদিকদের জানান, আদালত যা বলবে, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ শুরু হবে।

Advertisement

এর পরেই কিছুটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন আন্দোলনকারীরা। খুশি গোপন করেননি রাসমণিও। তিনি বলেন, ‘‘কোথায় জট, তা জানতে এসেছিলাম। আমাদের বলা হয়েছে, দ্রুততার সঙ্গে নিয়োগ দিয়ে বাড়ি পাঠানো হবে। কবে নিয়োগ, সেটা ২২ তারিখ (ডিসেম্বর) জানতে পারব। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে আশা করি আমরা দ্রুত স্কুলে ফিরতে পারব। জীবনটা বাঁচবে। আমরা খুবই খুশি হয়েছি আজ।’’ এখানেই থামেননি রাসমণি। তিনি বলেন, ‘‘মাননীয়া (মুখ্যমন্ত্রী) বলেছিলেন, ওয়ে আউট বার করে আমাদের জানাবেন। শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আজ প্রতিশ্রুতিপূরণের দিন এসে গিয়েছে। দুঃখ দূর হবে। হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারব।’’

নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর ২০২০ সালে ধর্মতলার প্রতিবাদ মঞ্চে যোগ দেন রাসমণি। সেই থেকে সেটাই তাঁর ঘরবাড়ি। চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, ২০১৬ সালের এসএলএস-টির নম্বরভিত্তিক মেধাতালিকা প্রকাশ করা হয়নি। সামনের সারির মেধাকে বঞ্চিত করে পিছনের সারির প্রার্থীদের নিয়োগ করা হয়েছে। এবং এসএমএসের মাধ্যমে অবৈধ নিয়োগ হয়েছে। এর আগে ২০১৯ সালে ২৯ দিন অনশন করেছিলেন ওই চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও তাঁরা চাকরি পাননি— এই অভিযোগে আবার অনশনে বসেন কয়েকশো যুবক-যুবতী। ২০২১ সালে সল্টলেকে ১৮৭ দিন ধর্না দেন। তার পর গত ১০০০ দিন কেটেছে রাস্তায়।

২০২০ সালে যখন প্রথম বার ধর্নায় যোগ দেন, তখন রাসমণির ছেলের বয়স তিন বছর। বাবা-মায়ের কাছে ছেলেকে রেখে রোজ কলকাতায় আসতেন। রাতে ফিরে যেতেন পূর্ব মেদিনীপুরের ভোগপুরে। এ ভাবেই কেটে গিয়েছে তিন বছর। সব সময় পাশে ছিলেন তাঁর স্বামী অমিত মাইতি। তিনি পেশায় আইনজীবী। রাসমণি আক্ষেপ করে জানিয়েছিলেন, ‘‘আমাদের থাকার কথা স্কুলের ক্লাসরুমে। আমরা পড়ে রয়েছি রাস্তায়। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, উৎসব— সব কাটছে রাস্তাতেই।’’ তবু এক দিনও ধর্নামঞ্চে আসা বন্ধ করেননি রাসমণি। আশা ছিল সরকার হয়তো তাঁদের দাবি মেনে নেবে। কিন্তু সেই ধর্না ১০০০ দিনে পৌঁছলে ধৈর্য হারান রাসমণিরা। মাথা কামিয়ে ফেলেন।

চাকরিপ্রার্থীদের এই ধর্না তথা প্রতিবাদ নিয়ে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেছিলেন, ‘‘নাটক চলছে।’’ সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা কটাক্ষ ছিল, ‘‘এ রাজ্যে দুঃশাসন, কুশাসন চলছে।’’ রাসমণির খবর প্রকাশ্যে আসতে ধর্নামঞ্চে ছুটে যান কুণাল। তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে কুণাল আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করে কথা বলবেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। কুণালের মধ্যস্থতাতেই ঠিক হয় সোমবার হবে বৈঠক।

পরে রবিবার কুণাল জানান, তিনি নিজেও হাজির থাকবেন ওই বৈঠকে। তবে শাসকদলের সদস্য হিসাবে নয়। চাকরিপ্রার্থীদের তরফে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে ওই বৈঠকে হাজির থাকবেন তিনি। শেষ পর্যন্ত বৈঠকে হাজির ছিলেন তিনি। বসেছিলেন রাসমণিদের পাশেই। বৈঠক শেষে চাকরিপ্রার্থীরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সমস্ত আইনি জটিলতা কাটিয়ে যেন চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হয়। মোট ৫,৫৭৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাঁরা এ-ও জানান, আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ ব্যাপারে কতদূর অগ্রগতি হয়েছে, তার রিপোর্ট দিতে হবে। আপাতত ২২ ডিসেম্বর সেই রিপোর্ট পেশের দিন ঠিক হয়েছে। ওই দিন মিটিংয়েই তাঁরা এ বিষয়ে জানতে পারবেন। এর পরেই রাসমণি জানান, তিনি খুশি। এ বার ঘরে ফিরতে পারবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement