ফাইল চিত্র।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল তমলুকের নিম্ন আদালত। পাঁচ বছরের একটি মেয়েকে ধর্ষণের মামলায় দণ্ডিত সেই যুবককে সম্প্রতি বেকসুর মুক্তি দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট।
গুরুপদ দাস নামে ওই যুবকের আইনজীবী কল্লোল মণ্ডল ও সাবির আহমেদ জানান, পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা ওই নাবালিকার মা ২০১২ সালের ৩১ মে অভিযোগ জানান, ২৬ মে তাঁর মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়। ৭ জুন গুরুপদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের অগস্টে গুরুপদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার। ২০১৪ সালের ১৯ মে নিম্ন আদালত ওই যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
হাইকোর্টে আপিল মামলায় রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ এবং ‘লিগ্যাল রিমেমব্রান্স’ দফতর গুরুপদের আইনজীবী হিসেবে কল্লোল ও সাবিরকে নিয়োগ করে। আপিল মামলার শুনানি হয় বিচারপতি সহিদুল্লা মুনশি ও বিচারপতি মহম্মদ নিজামুদ্দিনের ডিভিশন বেঞ্চে। ওই যুবকের আইনজীবীরা সওয়াল করেন, ঘটনার পাঁচ দিন পরে নাবালিকার মা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। মায়ের অভিযোগ ছিল, তাঁর মেয়ে স্কুল থেকে ফিরে বাড়ির পাশের মাঠে খেলছিল। গুরুপদ তাকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে রাস্তার ধারের ঝোপের ভিতরে ধর্ষণ করে। কিন্তু মেয়েটির দাদু চিকিৎসকদের জানান, সাইকেল থেকে পড়ে গিয়ে যৌনাঙ্গে আঘাত পেয়েছে তাঁর নাতনি। তদন্তকারী অফিসার মামলার নথিতে ঘটনাস্থলের যে-নকশা দেন, তাতে কোনও ঝোপের উল্লেখ ছিল না।
আইনজীবীরা আরও জানান, গুরুপদ ওই নাবালিকাকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে মেয়েটির সহপাঠী তদন্তকারীকে জানিয়েছিল। ওই সহপাঠী মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। কিন্তু তদন্তকারী পুলিশ অফিসার তার গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করেননি। মেয়েটির দাদু পুলিশকে জানান, তাঁর নাতনিকে গুরুপদের ভাই ফেরত দিয়ে যান। সেই গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীরও গোপন জবানবন্দিও নথিভুক্ত হয়নি।
সরকারি কৌঁসুলি অরুণ মাইতি জানান, গুরুপদ ওই নাবালিকার আত্মীয়। পাঁচ বছরের মেয়েটি কী কারণে যুবকের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেবে। গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের জবানবন্দি নথিভুক্ত না-করার অর্থ এই নয় যে, ঘটনাটি ঘটেনি। সরকারি কৌঁসুলিদের একাংশ জানান, কিছু ক্ষেত্রে তদন্তে ফাঁক থেকে যাওয়ায় অভিযুক্তেরা তার সুবিধা পেয়ে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন ফাঁক থাকায় ওই যুবককে বেকসুর মুক্তি দেওয়া হয়েছে উচ্চ আদালতে।