কুণাল বলেন, ‘‘অতীতে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি থেকে তাপসী মালিক, নন্দীগ্রাম গণহত্যা, সমস্ত মামলারই তদন্ত ভার গিয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে, তার ন্যায়বিচার এখনও অধরা। আমাদের প্রশ্ন, দিল্লিতে যখন দাঙ্গায় মানুষের মৃত্যু হয়, উন্নাও, লখিমপুরে অন্যায় হয়, তখন সিবিআই তদন্ত হয় না কেন?’’
গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বগটুই কাণ্ডের তদন্ত ভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। সিবিআইকে তদন্তে সব রকম সহযোগিতার বার্তা দিয়েছে শাসক তৃণমূল। পাশাপাশি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে, অতীতে বহু তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে গিয়েছে, তার ন্যায়বিচার এখনও পাওয়া যায়নি। এ ক্ষেত্রেও তেমন হলে প্রতিবাদ হবে।
আদালতের নির্দেশ নিয়ে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘সিবিআই আলাদা কী করবে জানি না। সিট তদন্ত অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এর আগে কোর্টই সিবিআইকে বলেছিল ‘তোতাপাখি’। আদালত বলেছে যখন, তখন আর কী বলব।’’ তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক তথা দলীয় মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রামপুরহাটে যা যা করার ছিল, তা করা হয়েছে। সমস্ত রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরও আদালত নির্দেশ দিয়েছে সিবিআই তদন্তের। আমরা তদন্তে সহযোগিতা করব।’’ তার পরই কুণাল বলেন, ‘‘অতীতে রবীন্দ্রনাথের নোবেল চুরি থেকে তাপসী মালিক, নন্দীগ্রাম গণহত্যা, সমস্ত মামলারই তদন্ত ভার গিয়েছিল সিবিআইয়ের হাতে, তার ন্যায়বিচার এখনও অধরা। আমাদের প্রশ্ন, দিল্লিতে যখন দাঙ্গায় মানুষের মৃত্যু হয়, উন্নাও, লখিমপুরে অন্যায় হয়, তখন সিবিআই তদন্ত হয় না কেন? যাই হোক, এ বার আর রাজ্য সরকার কিংবা মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ দোষারোপ করতে পারবে না। বল এখন সিবিআইয়ের কোর্টে।’’
সিবিআইয়ের সঙ্গে বিজেপি-র যোগের ইঙ্গিত করে কুণাল বলেন, ‘‘বিজেপি-র নেতারা এবং রাজ্যপাল যখন বলছিলেন, এ বার দেখুন কী কী হয়, আমরা বুঝতে পেরে গিয়েছিলাম, কোথা থেকে কী কী হতে চলেছে। তার পরও আদালত যখন এই রায় দিয়েছে, আমরা সহযোগিতা করব।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘সিবিআইয়ের বিরোধিতা তো করবই না, সহযোগিতা করব। কিন্তু যদি দেখা যায়, ন্যায়বিচার হয়নি, নির্দিষ্ট ঘটনার গণ্ডি পেরিয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি হচ্ছে, তা হলে গণ আন্দোলন ও প্রতিবাদ হবেই। সিবিআই নিরপেক্ষ নয়, সিবিআই বিজেপি-র পক্ষে। কারণ অতীতে দেখা গিয়েছে, বিজেপি-তে যোগ দিলে সিবিআই ব্যবস্থা নেয় না। যেমন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।’’
তৃণমূল সহযোগিতার বার্তা দিয়েও কটাক্ষ করলেও, আদালতের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছে সিপিএম, কংগ্রেস। সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের মতে, যে ভাবে অকুস্থলে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী পুলিশ আধিকারিকদের কাউকে (আনারুল হোসেন) ধরার নির্দেশ দিচ্ছিলেন এবং যে ভাবে তিনি কড়া ভাবে মামলা সাজানোর কথা বলেছিলেন, তা ন্যায্য বিচারের পরিপন্থী। তাই এই অবস্থায় সিবিআই তদন্তের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করছেন তিনি। কংগ্রেসের প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীও কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের সিবিআই তদন্তের নির্দেশকে স্বাগত জানাই। কিন্তু আদালত আমাদের ধন্যবাদ পাওয়ার দিকে তাকিয়ে কোনও রায় দেয় না। আশা করি, এ বার সত্য প্রকাশ্যে আসবে।’’