বগটুই-কাণ্ড নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ মমতার। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
ডেউচা পাঁচামির কয়লা খনি প্রকল্প আটকাতে বগটুইয়ে ষড়যন্ত্র করে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার ষড়যন্ত্র-তত্ত্বের ইঙ্গিত দিয়ে মমতা বললেন, ‘‘ডেউচা-পাঁচামির প্রকল্পে বাধা দিতেই হয়তো রামপুরহাটে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। বাংলায় কর্মসংস্থান হোক, উন্নয়ন হোক, বিরোধীরা চায় না।’’
বগটুইয়ে যে পুলিশের ভুল ছিল, রবিবার আরও একবার মেনে নিলেন মমতা। পাশাপাশিই, রামপুরহাটের ঘটনায় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে বলেও দাবি করলেন তিনি। পাহাড়ে তিন দিনের সফরে গিয়ে শিলিগুড়ির একটি সরকারি কর্মসূচিতে বগটুই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি-কে একযোগে বিঁধলেন তিনি। বললেন, ‘‘মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করছেন বিরোধীরা।’’
গত সোমবার রাতে রামপুরহাটে তৃণমূল শাসিত পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন ও পরবর্তী বগটুই গ্রামে আট জনের হত্যার ঘটনায় গোটা রাজ্যেই আলোড়ন ছড়িয়েছে। ওই ঘটনায় শুরু থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক ও শহরের এসডিপিও যে নিজের কাজ সঠিক ভাবে করেনি, তা বৃহস্পতিবার বগটুই গিয়ে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশে ওই দিনই আইসি ও এসডিপিও-কে সাসপেন্ড করে রাজ্য পুলিশ। কিন্তু তার পরেও মমতার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে আঙুল তুলছেন বিরোধীরা। কারণ, তিনিই রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী। শিলিগুড়িতে রবিবার মমতা বললেন, ‘‘হ্যাঁ, পুলিশের ভুল ছিল। উপপ্রধান খুনের পর ওদের আশঙ্কা করা উচিত ছিল কিছু একটা হতে পারে। ওরা ঠিক ভাবে কাজ করেনি বলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’
বগটুইয়ের ঘটনায় তৃণমূল সরকারকে অহেতুক কাঠগোড়ায় তোলা হচ্ছে বলেও দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওখানে একটা ঘটনা ঘটেছে। আমরা তো ঘটাইনি। ওখানে খুন হয়েছে তৃণমূল নেতা। যাদের বাড়িতে আগুন লেগেছে, তারাও তৃণমূলের লোক। এ দিকে, রাজনৈতিক টিভিগুলি তৃণমূলকেই গালাগালি করছে। তা হলেই বুঝুন, আমার হাত-পা-মাথা কাটল, আবার আমাকেই গালাগালি দিচ্ছে!’’
তবে হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে সরকার নিজের কাজ সঠিক ভাবেই করেছে বলেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, ‘‘সরকার তদন্ত শুরু করতে সিট গড়েছে। ওসি-এসডিপিও-কে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তৃণমূলের ব্লক সভাপতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত ২২ জনকেও। শুধু তাই নয়, আমি নিজে গিয়েছি সেখানে। অসহায়দের সাধ্য মতো সাহায্য করেছি। জানি, মৃত্যুর বিকল্প টাকা নয়। কিন্তু কেউ মরে গেলে পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে। বাচ্চাগুলোকে কে দেখবে? তাই পাঁচ লক্ষ করে দিয়েছি। ওদের কী দরকার জিজ্ঞেস করেছিলাম। ওরাই বলল, বাড়িটা মেরামত করতে হবে। সেই মতো প্রথমে এক লক্ষ টাকা দিতে বলেছিলাম। ওরা বলল, ওই টাকায় হবে না। তাই, দু’লক্ষ টাকা করে দিয়েছি। হাসপাতালে এক মহিলা ভর্তি আছে। তাকেও এক লক্ষ দিয়েছি। বাকি আহতদের দিয়েছি ৫০ হাজার টাকা।’’