বগটুই নিয়ে মমতা ও অনুব্রতকে নিশানা করলেন শুভেন্দু। ফাইল ছবি।
বগটুই-কাণ্ডে আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি বিধায়কের দাবি, ‘‘ভাদু শেখের মৃত্যুর পর মমতাই বলেছিলেন কয়েকটা বাড়ি জ্বলছে জ্বলুক না।’’ তিনি আরও দাবি করেন, বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের মোবাইল পরীক্ষা করলেই এর সত্যতা জানতে পারবেন তদন্তকারীরা। শুভেন্দুর বক্তব্য নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়েঅনুব্রত বলেন, ‘‘শুভেন্দু একটা গাড়ল। আনন্দবাজার অনলাইনের নাম আছে। গাড়লের কথার গুরুত্ব দেবে না আশা করি।’’
রবিবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামের জানকীনাথ মন্দিরের সামনে একটি দলীয় সভায় বীরভূমের বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে শোনা যায় শুভেন্দুকে। তাঁর কথায়, “সেদিন পুলিশমন্ত্রীই নির্দেশ দিয়েছিলেন ভাদুকে মেরেছে, কয়েকটা বাড়ি জ্বলুক না।” তিনি আরও বলেন, ‘‘সেদিন রাতে বগটুইয়ে যে গণহত্যা চলেছিল, তা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ঘটেছে।’’এর পর নিশানা করেন অনুব্রতকে। বলেন, “অনুব্রত মণ্ডলের মোবাইল পরীক্ষা করলেই ধরা পড়বে — ওই দিন ঘটনার সময় কত সময় ধরে ফোন, হোয়াটসঅ্যাপে তাঁর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এবং প্রমাণ হয়ে যাবে পুলিশমন্ত্রীই সেদিন নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন,‘ভাদুকে মেরেছে, কয়েকটা বাড়ি জ্বলুক না।”
শুভেন্দুর মন্তব্য, “মমতা ১১ বছর পুলিশ মন্ত্রীর চেয়ারে আছেন। পুলিশমন্ত্রী হিসেবে উনি ফেল (ব্যর্থ), পুলিশও ফেল। আপনার (পড়ুন মমতা) রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ফেল”। হুঁশিয়ারির সুরে তিনি জানান, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কেন্দ্রকে উনি জানিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘বধ্যভূমি পশ্চিমবঙ্গে এখনই হস্তক্ষেপ করুন। ৩৫৫ ধারা প্রয়োগ করবেন নাকি ৩৫৬ ধারা সেটা আপনাদের সরকারের ব্যাপার।” এখানেই থামেননি শুভেন্দু। বলেন, ‘‘এই রাজ্যে গণতন্ত্র শেষ হয়ে গিয়েছে। সমস্ত নির্বাচনেই ভোট লুঠ এখন একটা ট্রেন্ড।”
বিজেপি বিধায়কের কটাক্ষ, “বগটুইয়ে এতগুলো সংখ্যালঘু মহিলার দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল অথচ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে বিচলিত নন। দুটো শিশুকে পুড়িয়ে মারা হলও, এর জন্যও বিচলিত নন মুখ্যমন্ত্রী। বসিরহাটের ১১ বছরের মেয়েকে ১৫ জন মিলে ধর্ষণ করেছে, সে সম্পর্কে ওঁর কোনও মন্তব্য নেই। তিনি ডেউচা পাঁচামি নিয়ে ভাবিত।” উল্লেখ্য, রবিবারই মমতা অভিযোগ করেছেন বীরভূমের ডেউচা-পাঁচামি প্রকল্প আটকাতে রামপুরহাট-কাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন।
শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘সিবিআইকে ধমকাচ্ছেন মমতা”। বলেন, “কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ ছাড়া বধ্যভূমি পশ্চিমবঙ্গ কোনও ভাবে শুধরবে না”। বলেন, “বগটুই-কাণ্ড নিয়ে অনুব্রত মণ্ডলকে এক বার তুললে (পড়ুন জেরা করলে) সবকিছু বেরিয়ে আসবে। ওর কল হিস্ট্রি, কল রেকর্ড, হোয়াটসঅ্যাপে কতবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কথাবার্তা হয়েছে, সবকিছু প্রমাণ হবে।” রামপুরহাট-কাণ্ডে তৃণমূল নেতার গ্রেফতারি নিয়েও তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আনারুল পুলিশকে আসতে দেয়নি। আনারুল কে! পুলিশকে বাধা দেওয়ার ক্ষমতা ওকে কে দিয়েছে! সেটা তো মুখ্যমন্ত্রীই দিয়েছেন। আনারুলের কল রেকর্ড চেক করলে অনুব্রত, রানা, আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়— সবাই ধরা পড়বে। প্রমাণ হয়ে যাবে, পুলিশমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এ সব হয়েছে। দেড় ঘণ্টা ধরে একটি সভ্য সমাজে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, যা মেনে নেওয়া যায় না।” শুভেন্দুর এই বক্তব্যকে পাত্তা দিতে নারাজ অনুব্রত। বলেন, ‘‘ওর কথায় কে পাত্তা দিতে যাবে!’’