প্রতীকী ছবি।
জয়-পরাজয়ে বিশেষ চমকের সম্ভাবনা নেই। তবু রাজ্যসভার এ বারের নির্বাচন ঘিরে ঘটনাপ্রবাহ ছায়া ফেলতে চলেছে বাংলার রাজনীতির সমীকরণে। সরাসরি প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা বিধানসভার মধ্যে কক্ষ সমন্বয়ের অঙ্কেও।
এ রাজ্য থেকে শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনে আজ, শুক্রবার ভোট। বিধানসভায় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন ২৯৩ জন বিধায়ক। দেশের ৫৯টি রাজ্যসভা আসনেই ফলাফল স্পষ্ট হয়ে যাবে সন্ধ্যার মধ্যে। বাংলা থেকে পাঁচ আসনে প্রার্থী আছেন ৬ জন। বিধায়ক-সংখ্যার বিচারে তৃণমূলের চার প্রার্থী নাদিমুল হক, শুভাশিস চক্রবর্তী, আবীর বিশ্বাস ও শান্তনু সেনের জয় নিশ্চিত। কংগ্রেস প্রার্থী অভিষেক মনু সিঙ্ঘবিরও তৃতীয় বারের জন্য রাজ্যসভা-যাত্রা প্রায় পাকা। আর বিরাট কোনও অঘটন না ঘটলে এ বারও ভোটে দাঁড়িয়ে জেতার অনুভূতি অধরা থাকবে সিপিএম প্রার্থী রবীন দেবের! বিজেপির তিন বিধায়ক অবশ্য আজ ভোট দিতে আসছেন না।
ফলাফলের আগেই বিধানসভার দুই বিরোধী পক্ষ কংগ্রেস এবং বামফ্রন্টের মধ্যে তিক্ততা তুঙ্গে! কংগ্রেস প্রার্থী সিঙ্ঘবিকে তাঁদের অতিরিক্ত ভোট দিয়ে সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেসের ক্ষোভ, জয়ের সংখ্যা নেই জেনেও সিপিএম কেন প্রার্থী দিতে গেল? সিপিএমের যুক্তি, কংগ্রেস-তৃণমূল সমঝোতা হচ্ছে দেখেও তাদের পক্ষে হাত গুটিয়ে বসে থাকা কী ভাবে সম্ভব? এই বিরোধেই নতুন মাত্রা যোগ করেছে সিঙ্ঘবির জমা দেওয়া হলফনামা নিয়ে সিপিএমের অভিযোগ। কংগ্রেস বেজায় ক্ষুব্ধ হলেও সিপিএম প্রার্থী রবীনবাবু বৃহস্পতিবার রীতিমতো হলফনামা দিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছেন।
সিঙ্ঘবি নিজে এ দিন ফের মন্তব্য করেছেন, ‘‘যাবতীয় অভিযোগ ভিত্তিহীন, অর্থহীন এবং মানহানিকর। কমিশনও এই বিষয়ে কিছু জানতে চায়নি।’’ তবে সিঙ্ঘবি মেনে নিয়েছেন, ২০০৬ সালে রাজস্থানে পেশ করা হলফনামায় তাঁর বয়স ভুল লেখা ছিল! রাজ্যসভা ভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা বিধানসভার সচিব জয়ন্ত কোলে অবশ্য প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘‘বিষয়টি কমিশনের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের এক্তিয়ারভুক্ত।’’ কংগ্রেস-বাম সম্পর্কে ফাটল ধরেছে দেখেই তার আরও সুযোগ নিচ্ছে তৃণমূল। পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যেমন বলেছেন, ‘‘মনোনয়নপত্র পরীক্ষার পরে অভিযোগের অর্থ হয় না। সিপিএম আগের বার নিজেদের প্রার্থী নিয়ে যা করল, তার পরে এ সব ওদের পক্ষেই সম্ভব!’’
দল বদল করা ১২ জনকে বাদ দিলে কংগ্রেসের হাতে এখন ৩২ এবং বামেদের ৩০ জন বিধায়ক। কংগ্রেস ছেড়ে আসা ১০ জনকে তৃণমূল বলেছে সিঙ্ঘবিকে ভোট দিতে। আর বাম থেকে তৃণমূলে যাওয়া দু’জনকে ভোটদানে বিরত রাখার কৌশল নেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তৃণমূলের কোনও বাড়তি ভোট না পেলেও কংগ্রেস প্রার্থীর সরাসরি অঙ্কে জিতে যাওয়ার কথা। তবে আগামী লোকসভা ভোটের আগে দলভারী করার লক্ষ্যে বাম শিবির থেকে কয়েকটি ভোট আজ তৃণমূল নিজের দিকে টেনে নিতে পারবে কি না, তা নিয়ে গুঞ্জন চলছে! রাজ্যসভায় ভোট দেবেন বলে এ দিনই বিধায়কের পরিচয়পত্র তৈরি করানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতার!