সীমান্ত সুরক্ষায় মমতার সমর্থন চাইলেন রাজনাথ

তাঁর সফর ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই সুর চড়িয়ে থাকুন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সংঘাতের পথে হাঁটলেন না। বরং রাজ্যের সহযোগিতা নিয়েই সীমান্তে গরু পাচার এবং অনুপ্রবেশের মতো সমস্যার সুরাহা করবেন বলে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা ঘুরে আশ্বাস দিয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪১
Share:

আংরাইলে রাজনাথ।— নিজস্ব চিত্র।

তাঁর সফর ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই সুর চড়িয়ে থাকুন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সংঘাতের পথে হাঁটলেন না। বরং রাজ্যের সহযোগিতা নিয়েই সীমান্তে গরু পাচার এবং অনুপ্রবেশের মতো সমস্যার সুরাহা করবেন বলে বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকা ঘুরে আশ্বাস দিয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সফরের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য দেখছেন। কিন্তু রাজনাথ বললেন, ‘‘ওই বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। যা কিছু করার এখানকার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সহযোগিতা নিয়েই করব। আমি আত্মবিশ্বাসী, ওঁর সমর্থন আদায় করেই ছাড়ব।’’

যদিও রাজনাথের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করে রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহলের এক কর্তা বলেন, ‘‘উনি আসার আগে কোনও কিছু নিয়েই আলোচনার প্রয়োজন বোধ করেননি। শুধু আসবেন বলে একটা মামুলি ফ্যাক্স পাঠিয়ে দিয়েছেন। আজ যা বলছেন, চাপে পড়ে বলছেন।’’ তাঁর টিপ্পনি, ‘‘তবে এই বোধোদয় একটু দেরিতেই হল।’’

Advertisement

এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ বনগাঁ স্টেডিয়ামে রাজনাথের হেলিকপ্টার নামে। সেখান থেকে সড়কপথে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে আংরাইল সীমান্তে বিএসএফ ক্যাম্পে গিয়ে জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে আংরাইলের সীমান্ত-লাগোয়া এলাকায় গিয়ে ইছামতী নদীর ধারে কিছু জায়গা ঘুরে দেখেন। বনগাঁয় রাজনাথ বলেন, ‘‘সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। রাজ্যের সহযোগিতা আশা করছি।’’

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এখন যতই রাজ্য সরকারের সহযোগিতার কথা বলুন, তিক্ততা যে পুরোপুরি কেটে গিয়েছে তা নয়। রাজ্য সরকারের শীর্ষ মহলের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় উনি কিন্তু সৌজন্য বজায় রাখেননি। অনেক দেরি করে এ সব বলছেন। ছিটমহলের জমি চিহ্নিত করা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই রাজ্যকে দরকার হয়। তাদের সহযোগিতা ছাড়া এ কাজ করা যায় না। এটাই দস্তুর। কিন্তু এই স্বাভাবিক রীতিকেই ওঁরা লঘু করে দিয়েছেন।’’

রাজ্যের মাটিতে রাজনাথের পা দেওয়া ইস্তক যে বিতর্ক শুরু হয়েছিল, এ দিনও তা তাঁর পিছু ছাড়েনি। পূর্ব নির্ধারিত কমর্সূচি অনুযায়ী আংরাইল সীমান্ত থেকে সরবেড়িয়া হয়ে তাঁর ধামাখালি যাওয়ার কথা ছিল। হঠাৎই জানানো হয়, পেট্রাপোল সীমান্তও ঘুরে দেখবেন মন্ত্রী। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রাজ্য পুলিশের কর্তারা তা মানতে চাননি। বিএসএফের এক শীর্ষকর্তা টেলিফোনে জানিয়ে দেন, আংরাইল থেকে পেট্রাপোল হয়ে বনগাঁ স্টেডিয়ামে ফেরার পুরো ১৪ কিলোমিটার পথই তাঁদের নাকাবন্দি করা আছে। মন্ত্রীর নজরদারির বিষয়টি তাঁরাই দেখভাল করবেন। সঙ্গে সঙ্গে এক পুলিশকর্তা বলেন, তা হলে এই মুহূর্ত থেকে গোটা রাজ্য পুলিশের ফোর্স তুলে নেওয়া হল। খানিক পরে অবশ্য মিটমাট হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তরফে রাজ্য পুলিশকে জানানো হয়, তিনি পেট্রাপোলে যাচ্ছেন না।

ঘটনাচক্রে, বেলা ১২টা নাগাদ রাজনাথ যখন আংরাইলে সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, ওই সীমান্ত থেকেই ছ’জন অনুপ্রবেশকারী ধরা পড়ে। তবে বিএসএফ নয়, তাদের ধরে রাজ্য পুলিশ। এদের এক জন সন্দেহভাজন জঙ্গি হতে পারে বলে জেলা পুলিশের দাবি। পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী জানান, এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

কয়েক মাস আগেই আংরাইল সীমান্তে আরপিএফ জওয়ান নির্মল ঘোষকে কুপিয়ে খুন করেছিল বাংলাদেশি গরু পাচারকারীরা। এ দিন তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন। সীমান্ত ঘুরে দেখার সময়েই স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে স্মারকলিপি দিয়ে জানান, গত মাস দুয়েক ধরে গরু পাচার প্রায় নেই। এলাকায় শান্তি ফিরেছে। কিন্তু অনুপ্রবেশ চলছে। মন্ত্রী গোটা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আশ্বাস দেন। পরে বনগাঁ থেকে বেরিয়ে সরবেড়িয়া হয়ে সোজা ধামাখালি চলে যান রাজনাথ। সেখানে তিনি দাবি করেন, আগের কেন্দ্রীয় সরকারের আমলে প্রায়ই জলপথে শত্রুরা আসত। অনুপ্রবেশ হত। গরু ও জাল টাকা পাচার হত। তাঁদের সরকার ক্ষমতায় এসেই তিন-চার মাসের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। তা রিপোর্টও পেশ করেছে। দিন পনেরো-কুড়ির মধ্যে তা প্রকাশ করা হবে। জলপথে হামলা, অনুপ্রবেশ, পাচার রুখতে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

বনগাঁতেই মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা মিটিয়ে ফেলা হবে। যেখানে আলোর সমস্যা আছে, আলোর ব্যবস্থা হবে। তাঁর কথায়, ‘‘যাতে এগুলো করা যায়, তার জন্য রাজ্য সরকারের সঙ্গেও কথা বলব।’’ গরু, জাল টাকা, মাদক পাচার ঠেকানো যে একা কেন্দ্রের পক্ষে সম্ভব নয়, তা-ও বলেন রাজনাথ। এর জন্য রাজ্যগুলিকেও উদ্যোগী হতে হবে। খুব শীঘ্রই বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

(তথ্য সহায়তা: অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য, সীমান্ত মৈত্র, নির্মল বসু)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement