বুধবার বিধানসভা ভবন চত্বরে ফুলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পাশাপাশি পার্থ-রাজীব। —নিজস্ব চিত্র।
এক পাশে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অন্য পাশে সুজিত বসু। আর মাঝের আসনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিধানসভা ভবন চত্বরে ফুলমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন ছবিই দেখা গেল। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে মঙ্গলবার গরহাজির থাকা রাজীব পরের দিনই বিধানসভায় এলেন। তবে কি দল সংক্রান্ত ‘জটিলতা’ কেটেছে? রাজীব জানিয়েছেন, স্পিকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েই তিনি এসেছেন। আর পার্থের কথায়, ‘‘এটা নিয়ে অঙ্ক কষা ভুল।’’
শুধু মঙ্গলবার নয়, গত তিন মাস ধরেই রাজীব রাজ্য মন্ত্রিসভার কোনও বৈঠকে অংশ নেননি। তৃণমূল ছেড়ে তাঁর বিজেপি-তে যাওয়া নিয়েও জল্পনা জোরদার। তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও মেনে নিয়ে নিয়েছেন, রাজীব দলে থাকবেন না বলে ঠিক করে ফেলেছেন। কিন্তু দলের তরফে তাঁর সঙ্গে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখা হয়েছে। সে কারণেই গত সোমবার পার্থর নাকতলার বাড়িতে আলোচনায় বসেছিলেন রাজীব। কিন্তু সেখানে তাঁর ক্ষোভ প্রশমন করা যায়নি বলেই রাজীবের ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। জানা গিয়েছিল, আলোচনা চালিয়ে গেলেও রাজীব সম্পর্কে ভিতরে ভিতরে কঠোর অবস্থানই নিচ্ছে তৃণমূল।
সেই আবহে রাজীবের এই অনুষ্ঠানে আসা, পার্থ-সুজিতের পাশে বসা, অনুষ্ঠানের ফাঁকে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা চালানো— সব কিছুই নতুন জল্পনা তৈরি করেছে। একই সঙ্গে নিজের বক্তৃতায় রাজীবকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এ বার ফুলমেলা কোভিডের জন্য ভাল ভাবে করা গেল না। কিন্তু আগামী বছর কী হবে কেউ জানে না। স্পিকার নিশ্চয়ই এই ধরনের উদ্যোগ আবার গ্রহণ করবেন।’’
আরও পড়ুন: বিশ্বাসঘাতকতার জন্য শুভেন্দুকে মানুষ ক্ষমা করবে না: সৌগত
রাজীব-তৃণমূল বর্তমান সম্পর্কের আবহে রাজীবের ‘আগামী বছর কী হবে কেউ জানে না’ মন্তব্য নিয়ে আবার জল্পনা তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের একাংশ যখন ওই বক্তব্যকে সরলমনে দেখছেন, তখন অন্য একাংশের মতে, বছরের শেষপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রাজীব আগামী বছরে তৃণমূল এবং তাঁর ‘অনিত্যতা’র দিকেই নির্দেশ করেছেন।
রাজীবের সঙ্গে কী কথা হল, অনুষ্ঠানের পর তা জিজ্ঞাসা করা হলে পার্থ জানিয়েছেন, শুধু রাজীব নন, তাঁর সঙ্গে সব সহকর্মীরই কথা হয়। পার্থর আরও দাবি, মন্ত্রিসভার বৈঠকে রাজীব ‘ব্যক্তিগত কারণে’ ছিলেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজীব মন্ত্রিসভার বৈঠকে ছিল না। তাতে কী হয়েছে! এটা নিয়ে অঙ্ক কষা ভুল।’’
আরও পড়ুন: ‘বিজেপিকে ঝটকা দিতে পারেন আপনি’, মমতা-কৃষক নেতা ফের ফোনে কথা
রাজীবও জানিয়েছেন তিনি পারিবারিক সমস্যার কারণে মঙ্গলবারের বৈঠকে হাজির থাকতে পারেননি। ‘যেখানে জানানোর’ তিনি সেখানে জানিয়েওছেন বলে তাঁর দাবি। দল ছাড়ার জল্পনা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে রাজীব বলেন, ‘‘আপনাদের জল্পনার সঙ্গে তো আর আমাকে মেলালে চলবে না। মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয় আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি প্রকৃতি ভালবাসি। আমি ফুল-ফল সব কিছু ভালবাসি। আমি বিধানসভার এক জন সদস্যও। আমাকে ডেকেছেন। এসেছি।’’
কিন্তু তিনি তো মন্ত্রিসভারও সদস্য। তা হলে সেই বৈঠকে কেন যাননি, তা হলে কি দলে কোনও সমস্যা হচ্ছে? জবাবে রাজীব বলেন, ‘‘আমার কী অসুবিধা হয়েছে তা সংবাদমাধ্যমকে বলব না। যেখানে জানানোর জানিয়েছি। মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে না যাওয়ার একটা বিশেষ কারণ ছিল। পারিবারিক কারণ ছিল।’’ রাজীবেরও দাবি, কোথাও কোনও দূরত্ব নেই। আগামী ১২ জানুয়ারি অমিত শাহ আবার রাজ্যে আসছেন। তিনি রাজীবের জেলা হাওড়ায় সভা করবেন বলেও জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাজীবের বক্তব্য, ‘‘কে কোথায় আসছেন আমার জানা নেই।’’