পশ্চিমবঙ্গ থেকে রাজস্থান থেকে কর্নাটক— টাকা তোলার জাল নানান রাজ্যে ছড়িয়েছিল পিনকন সংস্থা।
পিনকনের ধৃত চার কর্তাকে দ্বিতীয় বার নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পরে তদন্তের জাল ছড়াতে চাইছে রাজস্থান পুলিশের স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপ (এসওজি)-ও। তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে পিনকনের মোট ৮৬টি অ্যাকাউন্ট সিল করে দেওয়ার পথে হাঁটতে চলেছে তারা।
রাজস্থান পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘৬-৭টি ব্যাঙ্কে পিনকনের ৮৬টি অ্যাকাউন্ট চিহ্নিত করেছি আমরা। তার মধ্যে কয়েকটি রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও। চিহ্নিত অ্যাকাউন্টে আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা টাকার লেনদেন হয়েছে। ওই সব অ্যাকাউন্ট অবিলম্বে সিল করার জন্য আমরা ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দিয়েছি।’’
তবে অ্যাকাউন্ট সিল করার পথে হাঁটলেও তদন্তের জন্য এখনই পিনকন-প্রধানকে কলকাতায় আনতে চাইছেন না রাজস্থান পুলিশের কর্তারা। কারণ, পিনকনের সঙ্গে এ রাজ্যের শাসক দলের নেতা, পুলিশের পদস্থ কর্তা, আইনজীবীদের যোগাযোগ আছে বলে অভিযোগ। রাজস্থান পুলিশের ওই কর্তা বলেন, ‘‘পিনকন-কর্তাদের সঙ্গে কলকাতা পুলিশের দু’জন কর্তা, কয়েক জন আইনজীবী এবং রাজনৈতিক নেতার ভালই যোগাযোগ রয়েছে। আমরা অভিযান চালাতে গেলে আগেভাগেই যদি খবর পৌঁছে যায়, সেই ভাবনা থেকেই পশ্চিমবঙ্গ থেকে তাঁকে ধরার চেষ্টা করিনি।’’ তিনি জানান, কলকাতা থেকে পিনকন-কর্ণধার মনোরঞ্জন রায় এবং তাঁর সঙ্গীদের গ্রেফতার করার একাধিক সুযোগ পেয়েছিল এসওজি। কিন্তু তখন তাঁদের না-ধরে আট ঘাট বেঁধে ফাঁদ পেতে ২ নভেম্বর রাতে বেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে তাঁদের ধরা হয়।
পিনকনের চার কর্তাকে প্রথমে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল জয়পুরের নিম্ন আদালত। বৃহস্পতিবার ওই চার জনকে ফের ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হাজতে পাঠানো হয়। আবার প্রায় এক সপ্তাহের জন্য চার জনকে নিজেদের হেফাজতে পাওয়ার পরেই তদন্তের জাল ছড়াতে চাইছে এসওজি।
প্রাথমিক ভাবে পিনকন-কর্তাদের জেরা করে কী ভাবে তাঁরা আমানতকারীদের কাছ থেকে তোলা টাকা লোপাট করেছেন, তার খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। রাজস্থান পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতেরা প্রায় ৫০০ কোটি টাকা লোপাটের সত্যতা স্বীকার করেছেন। আরও হাজার কোটি টাকা কী ভাবে লোপাট হয়েছে এবং পিনকন গোষ্ঠী কোন কোন প্রভাবশালী ব্যক্তির সাহায্য পেয়েছে, বিস্তারিত ভাবে সেটা জানতে চাইছে এসওজি। জয়পুর পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, রাজস্থানের বিভিন্ন জেলায় পিনকনের টাকা তোলা নিয়ে আরও কয়েকটি অভিযোগ এসেছে। সেগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনে সংস্থাটির বিরুদ্ধে আরও মামলা হতে পারে।
তবে পিনকনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করে দিলেই লোপাট অর্থের হদিস মিলবে কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত নন রাজস্থান পুলিশের কর্তারা। কারণ, পিনকনের অনেক টাকাই লেনদেন হয়েছে নগদে। রাজস্থান পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বছর দুয়েক ধরে পিনকন একটি সংবাদপত্র প্রকাশনা সংস্থাকে নিয়মিত টাকা জুগিয়েছে। উত্তর ও পূর্ব ভারতে বিভিন্ন রাজ্য থেকে টাকা তুলে আর একটি বেআইনি লগ্নি সংস্থাতেও বিনিয়োগ করেছেন পিনকন-কর্তা। এই সব লেনদেনই হয়েছে নগদে।’’ এসওজি সূত্রের খবর, প্রায় দু’বছর ধরে সংবাদপত্র প্রকাশনা সংস্থায় মাসে ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা নগদে বিনিয়োগ করেছেন পিনকন-কর্ণধার। রাজস্থান পুলিশের দাবি, মনোরঞ্জন জানিয়েছেন, পিনকন অফিসের গুপ্তচক্রের এক পাণ্ডা কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের আইনজীবী। তাঁর মাধ্যমেই ওই প্রকাশনা সংস্থায় বিনিয়োগের বিষয়ে চুক্তি হয়। ভিন্ রাজ্য থেকে তোলা টাকা সড়কপথে কলকাতায় আনা হতো। সংবাদপত্র সংস্থায় বিনিয়োগ ছাড়াও প্রচুর টাকা বিদেশি মুদ্রায় বদল করে সংবাদমাধ্যমের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি-সহ অনেককেই দেওয়া হয়েছে বলে দাবি রাজস্থান পুলিশের কর্তাদের। তাঁরা জানান, সংবাদমাধ্যমের ওই প্রভাবশালী ব্যক্তিও গুপ্তচক্রের অন্যতম পাণ্ডা।