রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। ফাইল চিত্র।
পূর্ববর্তী আচার্য-রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে নবান্নের দীর্ঘ দ্বৈরথের অবসান-ইঙ্গিত ছিল সি ভি আনন্দ বোসের আগমনে। কিন্তু তাতে আবার সংশয়ের মেঘ দেখছে শিক্ষা শিবির-সহ বিভিন্ন মহল। সংশয়ের মূলে আছে রাজভবনের কয়েকটি নির্দেশ। যেমন, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্তর্বর্তী উপাচার্যদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাপ্তাহিক কাজের রিপোর্ট রাজভবনে আচার্যের কাছে পাঠাতে হবে। রাজ্যপাল বোসের আগাম অনুমোদন নিতে হবে আর্থিক লেনদেন সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যদের কাছে রাজভবন থেকে এই মর্মে নির্দেশ পৌঁছেছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, উচ্চশিক্ষা দফতর ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে আইনি পরামর্শ নিতে শুরু করেছে। এই নির্দেশ অনুযায়ী আপাতত কাজ করতে বারণ করা হয়েছে উপাচার্যদের। বিভিন্ন শিবিরের প্রশ্ন, তা হলে কি ধনখড়ের মতো নতুন রাজ্যপালের সঙ্গেও রাজ্যের সংঘাত শুরু হতে চলেছে?
রাজভবনের সাম্প্রতিক নির্দেশে জানানো হয়েছে, উপাচার্যেরা সরাসরি রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন। ধনখড়ের আমলে নিয়ম ছিল, উচ্চশিক্ষা সচিব মারফত রাজ্যপাল ও উপাচার্যদের যোগাযোগ হবে। এ বার রাজভবনের নির্দেশে বলা হয়েছে, বিশেষ দরকারে রাজ্যপালের এডিসি মেজর নিখিল কুমারের মাধ্যমেও আচার্যের সঙ্গে উপাচার্যেরা যোগাযোগ করতে পারেন। এ বার রাজভবনের তরফে বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয় দেখবেন রাজ্যপালের সিনিয়র বিশেষ সচিব দেবাশিস ঘোষ।
কয়েক সপ্তাহ আগে রাজ্যে ৩০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পদত্যাগের পরে অস্থায়ী উপাচার্যদের যে-সব নিয়োগপত্র দেওয়া হয়, তার মধ্যে কয়েকটিতে বিভিন্ন শর্ত দেওয়া হয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর্থিক বিষয় বা অন্য কোনও বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্বর্তী উপাচার্য নিয়োগের চিঠিতেও একই নির্দেশ ছিল। সেই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছিল, আচার্যের অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি হস্তান্তরের কোনও সিদ্ধান্তও নেওয়া যাবে না।
এমন সব নির্দেশ উপাচার্যদের পক্ষে সম্মানজনক নয় বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিমত। রাজভবনের নতুন নির্দেশে আর্থিক বিষয়ে রাজ্যপালের আগাম অনুমতির কথা বলা হয়েছে সব উপাচার্যকেই।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (জুটা)-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায়ের বক্তব্য, এক দিকে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে আচার্যের প্রতিনিধি নেই। পরিমার্জিত বিধি নেই। আর্থিক ভাবে জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবস্থা যখন এই রকম, সেখানে সাপ্তাহিক রিপোর্ট চেয়ে পরিস্থিতি বোঝা সম্ভব নয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (কুটা)-র সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ-রকম তো আগে দেখিনি। মাননীয় আচার্যের প্রতিনিধি না-থাকায় শিক্ষকদের পদোন্নতি ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ আছে। পঠনপাঠন, বিভাগীয় পরীক্ষা পরিচালনা এবং গবেষকদের নিত্য কাজকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত এত দিন হত বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই। এই সব ব্যাপারে কিছু সিদ্ধান্ত খুব দ্রুত নেওয়ার প্রয়োজন হয়। রাঝভবনের এই নির্দেশ কার্যকর হলে আশা করব, এই ধরনের অতিরিক্ত একটি বুরোক্র্যাটিক (আমলাতান্ত্রিক) স্তরের জন্য ছাত্রছাত্রীদের নিত্যদিনের কাজ অকারণ বিলম্বিত হবে না।’’