ফাইল চিত্র
কখনও নিম্নচাপ, কখনও বা অক্ষরেখা। কখনও আবার প্রতিবেশী দেশের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্ত! তার ফলেই রাজ্যের উপরে গত কয়েক দিনে অপার কৃপাদৃষ্টি পড়েছে বর্ষার। শনিবারও সকাল থেকে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অঝোরে ঝরেছে বর্ষার বারি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, বাংলাদেশ এবং লাগোয়া গাঙ্গেয় বঙ্গের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবেই এমন বৃষ্টি। আজ, রবিবারেও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হতে পারে। উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও ডুয়ার্সের জেলাগুলিতে।
এ বার ১২ জুন রাজ্যে পুরোপুরি বর্ষা ঢুকে পড়ার পর থেকেই প্রায় রোজই কম-বেশি বৃষ্টি মিলেছে। বস্তুত, গত কয়েক বছরে জুন মাসে এমন বর্ষা দেখা যায়নি। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, জুন মাসে এখনও পর্যন্ত গাঙ্গেয় বঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। কৃষি-আবহবিদদের মতে, জুনে এই ধরনের বৃষ্টি চাষের পক্ষে সহায়ক। এতে আমন ধানের বীজতলা তৈরিতে চাষিদের উপকার হবে। সেচের বা ভূগর্ভের জলের উপরে নির্ভরতা কমবে।
ভূ-বিজ্ঞানীদের মতে, অল্প সময়ের মধ্যে অতিবৃষ্টি হলে তার বেশির ভাগই মাটির ঢাল বেয়ে গড়িয়ে যায়। কিন্তু এমন লাগাতার নির্দিষ্ট পরিমাণে বৃষ্টি হলে ভূগর্ভের জলের ভাঁড়ারের পক্ষে তা উপযোগী। যদিও পরিবেশবিজ্ঞানীদের অনেকের মতে, ভূগর্ভের জলের ভাঁড়ার পূরণে খাল, বিল, পুকুর সহায়ক। মাটির ঢাল বেয়ে গড়িয়ে যাওয়া জলও তারা ধরে রাখে। কিন্তু যে ভাবে খাল, বিল, পুকুর গত কয়েক দশকে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়েছে তাতে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হলেও প্রকৃতির ভাঁড়ার পূরণে সমস্যা হতে পারে।
অনেকেই এ বার জুনের বৃষ্টি দেখে মনে করছেন, বর্ষা যেন পুরনো ছন্দে ফিরেছে। তবে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের অন্যতম ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথের পর্যবেক্ষণ, এ বার একের পর এক ঘূর্ণাবর্ত, নিম্নচাপ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তা সহজে বিলীন হচ্ছে না। দ্রুত স্থান বদলও করছে না। তার ফলে রাজ্যে বর্ষা মিলছে। তাঁর ব্যাখ্যা, এই পর্যায়ে ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপ বর্ষাকে সক্রিয় করে তোলে। ঘূর্ণাবর্ত বা নিম্নচাপের এই স্থায়িত্বের পিছনে বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন অনুষঙ্গ দায়ী। সেগুলি অনুকূলে থাকার ফলেই এমন পরিস্থিতি।