মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ভগবানের ভরসায় চলছে রেল। তাঁর জমানায় হওয়া কাজের দেখভাল না হওয়াতেই এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার নবান্নের সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি কাউকে কোনও আক্রমণ করিনি। যতটুকু বলার, ততটুকুই বলেছি। সিগন্যালিং সিস্টেম কেউ দেখেই না, ভগবানের দয়ায় চলছে।’’ অ্যান্টি-কলিশন ডিভাইস নিয়ে নিজের পুরনো অবস্থান ফের তুলে ধরেন মমতা। সঙ্গে বলেন, ‘‘আমি গতকাল বালেশ্বর গিয়েও কারও বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। রেলমন্ত্রী ও ধর্মেন্দ্রকে পাশে নিয়েই যা বলার বলেছি। কারণ এই সময়টা রাজনীতি করার সময় নয়। কিন্তু আজ দেখলাম বিজেপি পক্ষ থেকে আমার জমানায় কত মানুষ মারা গিয়েছিল তা নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে। নীতীশ কুমার, লালুপ্রসাদকে আক্রমণ করছে? আপনাদের সময় বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আমরা তো কখনও বলিনি। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয় সরকার মুখ বাঁচাতে আমাদের জমানার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন ‘‘রেল বাজেট তুলে দিয়েছে, রেল ভবন তুলে দিয়েছে। রেলটা যেন বেচার জন্য রেখে দিয়েছে। বিজেপি আমাকে বলতে বাধ্য করেছে। আমি বলেছিলাম কোনও রাজনৈতিক কথা বলব না, কারণ এটা কাজের সময়, মিথ্যে কথা রটিয়ে নিজেদের ভুল থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’
এর পরেই মমতা বলেন, এত মানুষের মৃত্যুর পরও ক্ষমা চাননি। আমি রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ট্রেনের ভাড়া বাড়াইনি। কিন্তু এখন তো প্রায় নিয়ম করে ভাড়া বাড়ান। আপনি নিজেদের শখ-আহ্লাদ পূরণের জন্য যে টাকা খরচ করেছেন, তা রেলকে দিতে পারতেন।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমি যে সব কাজ করে এসেছিলাম, তা ভাল ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। কয়েক মাস আগে আমি রেল যাত্রা করার সময় আমার আধিকারিকদের বলেছিলাম, নূন্যতম রক্ষণাবেক্ষণও এখন আর হয় না। আমি যা কাজ করে এসেছিলাম, সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণ হলেই এমন ঘটনা ঘটত না।’’
মমতা দাবি করেন, ‘‘আমি যখন রেলমন্ত্রী ছিলাম, দুর্ঘটনা প্রতিরোধী যন্ত্র তৈরি করেছিলাম। গোয়ায় গিয়ে সব ব্যবস্থা হয়েছিল। তার পর থেকে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছিল। এটি এমন একটি যন্ত্র, যা ট্রেনে বসানো থাকলে, এক লাইনে যদি দু’টি ট্রেন এসে পড়ে, বা সামনে কিছু পড়ে থাকে, আপনা থেকেই থেমে যাবে ট্রেন। কিছু গড়বড় দেখলে সতর্কবার্তা যাবে।’’ নাম না করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কাঠগড়ায় তোলেন তিনি। মমতা বলেন, ‘‘একটি স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে যেতে ১০ টাকা থেকে ৩০ টাকা খরচ হয়েছে। সংসদ ভবন, নিজের নামে স্টেডিয়াম। নিজের নাম বজায় রাখতে যে খরচ করেছে, তার একাংশও রেলকে দেওয়া হয়নি। এখনও রাজনীতি করার সময় নয়। কিন্তু মিথ্যে কথা বলে আমার প্রচার করা হয়েছে।’’
মোদীকে তাক করে মমতা বলেন, ‘‘গোধরায় কতজন মারা গিয়েছিল? আমি কী করে দিয়ে এসেছিলাম? যা কাজ করে এসেছিল, তাতেই তো এতদিন চলল। দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার সময়ে মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে আমার সময় কত মরেছে, নীতীশের সময় কত মরেছে, ব্রিটিশ রাজে কত মরেছে, সেইসব কথা টেনে আনা হচ্ছে। সরকার তাদের হাতে রয়েছে, তাঁরা এখন যা ইচ্ছে খুশি করতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গোধরায় চলন্ত ট্রেনে কারা আগুন লাগিয়েছিল। আপনাদের সময়ও জন মারা গিয়েছে? এসব প্রশ্ন করিনি। নিজের কাজ করেছি। ৫০ শতাংশ মানুষ এখনও আশঙ্কাজনক। কার গাফলতিতে মৃত্যু হয়েছে? কোনও সমন্বয় ছিল না। ৮-১০ মিনিটের মধ্যে কী ভাবে ২টি গাড়ি এসে গেল কী ভাবে? এ সবের জবাব সবার আগে দিতে হবে।’’
তাঁর জমানায় ঘটে যাওয়া ২টি দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘জ্ঞানেশ্বরীর ঘটনা ছিল নাশকতা, সাঁইথিয়াতেও যে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তাতেও নাশকতার প্রমাণ মিলেছিল। আমি তাই সেই সময় তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইকে দিয়েছিলাম।’’