ফাইল চিত্র।
অভিযোগের আঙুল রক্ষণাবেক্ষণের ত্রুটির দিকে উঠছিল দুর্ঘটনার পরে পরেই। নিউ ময়নাগুড়িতে ট্রেন কেন বেলাইন হয়েছিল, তার তদন্তে নেমে ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে গুরুতর গাফিলতির ইঙ্গিত দিলেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনারও। ১০ ফেব্রুয়ারি উত্তর সীমান্ত রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে লেখা একটি চিঠিতে ওই ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ কী ভাবে উপেক্ষিত হয়েছে, তা জানিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন নিরাপত্তা কমিশনার।
ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ২২৩৭৫ নম্বরের ডব্লিউএপি-৪ শ্রেণির ইঞ্জিনটি ১৮ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা সত্ত্বেও তার আবশ্যিক ট্রিপ-ইনস্পেকশন বা স্বাস্থ্যপরীক্ষা হয়নি। প্রতি সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার ছোটার পরে এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ওই ইঞ্জিনটিকে উত্তর রেলের আগরা ক্যান্টনমেন্ট ডিভিশনে বিভিন্ন রুটে ‘মিসিং লিঙ্ক’ বা মধ্যবর্তী পথে ট্রেন টেনে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহার হত।
কোনও নির্দিষ্ট ট্রেনে ব্যবহারের বদলে বিভিন্ন ট্রেনে ওই ইঞ্জিন বিভিন্ন সময়ে ব্যবহার করা হয়েছে বলে রেল সূত্রের খবর। এ ভাবে বিক্ষিপ্ত ভাবে ব্যবহারের ফলে যে-সব স্টেশনে ইঞ্জিন পরীক্ষার পরিকাঠামো রয়েছে, প্রায়শই সেগুলিতে ওই ইঞ্জিন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টে পরিকাঠামোহীন কোনও স্টেশনে ওই ইঞ্জিন পরীক্ষার নির্ঘণ্ট ফেলা হয়েছে। এটাই ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণে নজরদারির ক্ষেত্রে গুরুতর গাফিলতির ইঙ্গিত দিচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি ময়নাগুড়ির দুর্ঘটনায় মারা যান ন’জন। আহত হন অনেকে। সেই দুর্ঘটনার আগের রাতে আগরা ফোর্ট স্টেশন থেকে ইঞ্জিনটি ট্রেনের সঙ্গে জোড়া হয়। তার পরে নিউ কোচবিহার স্টেশনে ওই ইঞ্জিনের বিধিবদ্ধ পরীক্ষার নির্ঘণ্ট ফেলা হয়। অথচ সেখানে বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন পরীক্ষার কোনও পরিকাঠামোই নেই বলে অভিযোগ। পূর্ব-মধ্য রেলের সমস্তিপুর ডিভিশন থেকে কী ভাবে এমন ভুতুড়ে ইনস্পেকশন বা পরিদর্শনের নির্ঘণ্ট ফেলা হল, তা রেলকে খতিয়ে দেখতে অনুরোধ করেছেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার।
একই সঙ্গে ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে অন্তর্বর্তী পথে ব্যবহৃত লোকোমোটিভের পরীক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট স্টেশনে পরীক্ষার পারিকঠামো দ্রুত তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা কমিশনার। দুর্ঘটনার অব্যবহিত আগে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ইঞ্জিনে অস্বাভাবিকতা চোখে পড়ার কথা জানিয়েছিলেন রেলকর্মীদের একাংশ। যদিও চালক কোনও সমস্যা দেখতে পাননি বলে জানান। পরে ইঞ্জিনের ট্র্যাকশন মোটর খুলে পড়তে দেখা যায়। রেল সূত্রের খবর, ওই দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হতে এখনও কিছু সময় লাগবে। বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে রেলকর্মীদের সাক্ষ্য মিলিয়ে সেই রিপোর্ট তৈরি করা হবে।