দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে যাওয়ার জন্য সেই স্কাইওয়াক। — ফাইল চিত্র।
দক্ষিণেশ্বরে স্কাইওয়াকের কোনও ক্ষতি হোক কখনওই চায়নি রেল। মঙ্গলবার রাতে এমনটাই দাবি করলেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র। স্কাইওয়াক ভাঙা নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে একটি ‘রটনা’ ছড়ানো হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি নিয়ে তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। পাশাপাশি কৌশিকের দাবি, স্কাইওয়াকের ক্ষতি না করে অবশ্যই কোনও সমাধান বার হবে। কলকাতাবাসীর জন্য সেটা ভাল হবে। রেলের এই দাবি শুনে তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া, রেল লাইনচ্যুত হয়েছিল। মমতার ধমকে তা ফের লাইনে ফিরেছে।
বিশেষ সমস্যার কারণে পরিকাঠামোর অর্ধেক অব্যবহৃত রয়েছে দক্ষিণেশ্বর স্টেশনে। প্রান্তিক স্টেশনের পিছন দিকে যথেষ্ট জায়গা না থাকায় যাত্রা শেষে ট্রেন ঘোরানোর জন্য ক্রসওভার নেই। ইংরেজি ‘এক্স’ আকৃতির ওই ক্রসওভার না থাকায় ওই স্টেশনে আপ এবং ডাউন ট্রেন একই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে। ফলে ওই স্টেশনে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে একাধিক সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সমস্যা মিটিয়ে ট্রেন চলাচল মসৃণ করতে স্টেশনের পিছনে ৯০ মিটার অংশে লাইনের দৈর্ঘ্য বাড়াতে চায় মেট্রো। এই মর্মে গত নভেম্বরে নবান্নকে চিঠি দেয় রেল। সেই প্রসঙ্গ তুলে মঙ্গলবার দুপুরে রেল ও কেন্দ্রকে একসঙ্গে হুঁশিয়ারি দেন মমতা। স্পষ্ট বলেন, ‘‘শেষ রক্তবিন্দু থাকতে দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক ভাঙতে দেব না। এদের ঔদ্ধত্য দেখে আমি অবাক হয়ে যাই! হাত দিচ্ছে কোথায়? হাত দিচ্ছে দক্ষিণেশ্বরে! ক’দিন বাদে বলবে কালীঘাটটা দিয়ে দাও! শুনব না। যদি আমাকে বলে নাখোদা মসজিদ ভেঙে দাও আমি থোড়াই শুনব? এগুলো আমি মানতে বাধ্য নই। মানব না। যদি ওদের কোনও রকম জট হয় সেই জট আমি দূর করব। দরকারে আমার সঙ্গে বসুন। আমি অন্য রুট দেখিয়ে দেব। রুট বদলাতে সাহায্য করব। এমন আগেও অনেক করেছি।’’
নবান্নকে এই চিঠিই পাঠানো হয়েছিল রেলের তরফে। — নিজস্ব চিত্র।
এর পরেই রাতে রেল ভেবে দেখার বার্তা দেয়। কৌশিক বলেন, ‘‘একটা রটনা ছড়ানো হয়েছে যে, স্কাইওয়াকের ক্ষতি করার চেষ্টা চলেছে। আমরা কখনওই চাই না, স্কাইওয়াকের ক্ষতি হোক। আমাদের শূন্যে একটু জায়গা (এয়ারস্পেস)-র প্রয়োজন, কোনও জমির প্রয়োজন নেই।’’ রেলের তরফে এ-ও জানানো হয়েছে যে, এই প্রকল্পে কোনও সমস্যা হলে অবশ্যই ভাবনাচিন্তা করা হবে। তবে স্কাইওয়াক ভাঙা হোক, তা চায় না রেল। কৌশিকের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের সব প্রকল্পে অনেক সহযোগিতা করে। এই প্রকল্পে কোনও অসুবিধা হলে আমরা ভাবনাচিন্তা করব। তা থেকে অবশ্যই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘স্কাইওয়াকের ক্ষতি করে কোনও কাজ হোক, রেল চায়নি। দেখা যাক, অবশ্যই কোনও সমাধান বার হবে। কলকাতাবাসীর জন্য ভাল হবে।’’
রেলের বক্তব্য শুনে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বলেছেন, তাতে নরেন্দ্র মোদীর রেল চাপে পড়ে গিয়েছে। তাই জন্যই এই সুরবদল। রেল কী বলেছিল, সেই নথি প্রকাশ্যে রয়েছে। এখন এবস্থান বদল করলে সবাই বুঝতে পারবে। রেল লাইনচ্যুত হয়েছিল। মমতাদির ধমকের পর আবার লাইনে ফিরছে।’’