বীরভূমে পথ অবরোধ ধর্মঘটীদের। নিজস্ব চিত্র।
বাম ও কংগ্রেসের ডাকা ভারত ধর্মঘটে এ রাজ্যে মূলত প্রভাব পড়ল ট্রেন এবং বেসরকারি পরিবহণে। বেশ কিছু জায়গায় সরকারি বাসও কম পথে নেমেছে বলে অভিযোগ। ধর্মঘটের সমর্থনে রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর জখম হয়েছেন এক জন।
রেল ও বেসরকারি পরিবহণ ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিও হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। কিছু ধর্মঘট-সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নবান্নের দাবি, বুধবার ৯৫ শতাংশ সরকারি কর্মী কর্মস্থলে হাজির ছিলেন।
কলকাতা, রবীন্দ্রভারতী এবং পশ্চিমবঙ্গ রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পূর্ব নির্ধারিত সূচি মেনে পরীক্ষা হয়েছে। সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের হাজিরা ছিল নগণ্য। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলেও পড়ুয়াদের হাজিরা কম ছিল।
রেল জানায়, বুধবার শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখা ও মেন লাইনের বিভিন্ন স্টেশনে অবরোধ হয়। বনগাঁ শাখায় অবরোধের পাশাপাশি টিকিট কাউন্টার জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয় দমদম ক্যান্টনমেন্টে। সকালে রটে যায়, দক্ষিণ বারাসত স্টেশনের কাছে লাইনের পাশে চারটি বোমা রয়েছে। যদিও রেল পুলিশের দাবি, সেগুলি সুতলির গোলা। অবরোধের জেরে হাওড়া ডিভিশনে ৪৯টি লোকাল ট্রেন বাতিল হয়। ছ’টি দূরপাল্লার ট্রেন চলে ঘুরপথে। শিয়ালদহ ডিভিশনে ১৫৫টি লোকাল বাতিল হয়েছে। ১১টি দূরপাল্লার ট্রেন দেরিতে চলেছে।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় রাস্তাঘাটে লোকজন কম ছিল। অনেক জায়গায় বন্ধ ছিল দোকানপাট। পুলিশ জানায়, হুগলিঘাট স্টেশনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন চুঁচুড়ার পাঙ্খাটুলির বাসিন্দা বিল্টু কুণ্ডুর। তিনি ধর্মঘটের সমর্থনে রেলের তারে কলাপাতা ফেলতে গিয়েছিলেন। আপাতত হাসপাতালে ভর্তি। জেলার বিভিন্ন প্রান্তে দফায় দফায় রেল এবং সড়ক অবরোধ করা হয়েছে। হাওড়ায় মুম্বই রোডও অবরোধ করা হয়।
মুর্শিদাবাদে ধর্মঘটের প্রভাব ছিল লক্ষণীয়। ফরাক্কা, কান্দি, ডোমকল, বহরমপুরে দোকানপাট বন্ধ ছিল। সরকারি বাস চললেও যাত্রী ছিল হাতে গোনা। বাম-কংগ্রেসের দাবি, মানুষের সমর্থনেই ধর্মঘট সফল। শাসক দলের নেতা-কর্মীদের পথে দেখা যায়নি।
খড়্গপুরে পথে নেমেছিল বাম ও কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলি। বহু জায়গায় রেল ও সড়ক অবরোধ হয়। ঘাটাল, ঝাড়গ্রামে ধর্মঘটের ভাল প্রভাব পড়ে। ঝাড়গ্রামে জোর করে রেজিস্ট্রি অফিস বন্ধ করার অভিযোগে চার বাম নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তবে মেদিনীপুরের ছবি ছিল উল্টো।
বর্ধমানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ধর্মঘট-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে। ভাতারে ধর্মঘটীরা ট্রাক ভাঙচুর করেছে বলে অভিযোগ। তবে অনেক জায়গাতেই দোকানবাজার, অফিস খোলা ছিল। সরকারি দফতর খোলা ছিল বীরভূমেও। বেসরকারি বাস না-চললেও সরকারি বাস চলে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলায় এসইউসি-র সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। অবরোধে পুরুলিয়া স্টেশনে আধ ঘণ্টা আটকে থাকে তিনটি এক্সপ্রেস।
অভিযোগ, উত্তর দিনাজপুরের বারোদুয়ারি ও দেহশ্রীতে দু’টি বাসে ভাঙচুর হয় এবং জোর করে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা হয় দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট-গঙ্গারামপুরে। সকালে ইংরেজবাজারে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে মিছিল করে বাম ও কংগ্রেস।। অভিযোগ, ফরাক্কাগামী সরকারি বাস ভাঙচুর করা হয়। পুলিশের সামনেই হামলা হয় বলে অভিযোগ। সকালে কোচবিহারের কাছারি মোড়ে ধর্মঘট-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। সরকারি বাস ভাঙচুর হয় তুফানগঞ্জে।
(এই খবর প্রথম প্রকাশের সময় লেখা হয়েছিল, রেলের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছিল। পরে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়নি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য দুঃখিত।)