এত দিন ধরে শহরতলির ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তায় যে যথেষ্টই খামতি ছিল, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন রেলের কর্তারা।
বিভিন্ন সময়ে ট্রেনের ভিতরে আক্রান্ত হওয়ার পরে যাত্রীদের তরফে বারবার রেলের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে দরবার করা হয়েছে। অনেক আগে কাকোদকর কমিটির রিপোর্টেও যাত্রী-নিরাপত্তা নিয়ে অনেক কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। গত পাঁচ বছর ধরে বাজেটে রেলমন্ত্রক নিজেও যাত্রী-নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছে। দীর্ঘদিন ধরে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়ার জন্য যাত্রীদের টিকিটের উপরে আলাদা করে সেসও বসানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সুরক্ষার বিষয়ে পরিকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন হলেও যাত্রী-নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়েছে গিয়েছে।
আর দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত থাকায় যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। শহরতলির বেশির ভাগ স্টেশন চলে গিয়েছে দখলদার ও সমাজবিরোধীদের হাতে। এমনিতেই রেলে নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা যাত্রী তুলনায় নগণ্য। তার পরে যাঁরা নিরাপত্তা দেবেন, সেই আরপিএফ বা জিআরপি কর্মীদের অনেকেই নিরাপত্তা দেওয়ার বদলে ব্যস্ত হয়েছেন অন্য কাজে। এ প্রসঙ্গে যাত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য, প্ল্যাটফর্মে বিনা টিকিটের যাত্রী ও ভেন্ডার ধরে টাকা আদায় করতে কেন্দ্র ও রাজ্য পুলিশ ভাই ভাই। সারাক্ষণই তারা ব্যস্ত ওই কাজে। আর আছে ভিভিআইপি-দের ট্রেনে চড়ানো বা নামানোর ডিউটি। শিয়ালদহ বা হাওড়ায় দু’-এক ঘণ্টা দাঁড়ালে এই চিত্রটাই সবার চোখের সামনে পরিষ্কার হবে। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখভাল করতে তাঁদের হাতে আর সময় অবশিষ্ট থাকবে কী করে!
শিয়ালদহ বা হাওড়ায় যদি এই চিত্র হয়, তবে শহরতলির ছোট স্টেশনগুলিতে নিরাপত্তা কী হবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, নিরাপত্তার আঁটুনি শক্ত করা না গেলে এই রকম ঘটনা চলতেই থাকবে। টিটাগড়ে ট্রেনের ভিতরে বোমা ফেটে যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনায় পরে দেশ জুড়ে ট্রেনে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে হইচই শুরু হয়। ঘটনাটি সংসদেও ওঠে। এর পরেই রেল নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা শুরু করে। শুরু হয়ে যায় তৎপরতা। ঘটনার পরেই পূর্ব জেনারেল ম্যানেজার নিজে ঘটনাস্থলে যান। অফিসারদের নিয়ে বারবার বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে নতুন করে বেশ কয়েকটি সিধান্তও নিয়েছেন তাঁরা।
কী কী সেই সিদ্ধান্ত? এ বার থেকে রাতের শেষ দিকের ট্রেন ও দিনের শুরুর লোকাল ট্রেনগুলিতে প্রহরার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্ল্যাটফর্ম থেকে বেআইনি দখলদার উচ্ছেদ, আরপিএফ ও জিআরপি বাড়ানো, প্রয়োজনে রেলের অফিসগুলি থেকে আরপিএফ কর্মীদের তুলে নিয়ে যে সব স্টেশন বেশি অপরাধপ্রবণ, সেখানে মোতায়েন করা, সিসিটিভিতে মনিটর করা, প্রয়োজনে যাত্রীদের মাল পরীক্ষা করা ইত্যাদি। রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, ‘‘শীঘ্রই এই সব ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। পাশাপাশি, কী ভাবে অপরাধ কমানো যায়, তা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বৈঠক করবে রেল। শীঘ্রই রেলের আধিকারিকেরা যাবেন রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে।’’
রেলের এই সব সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রীদের মন্তব্য, কোনও ঘটনা ঘটলেই এ সব সিদ্ধান্তের কথা শোনা যায়। এত দিনেও যা হয়নি, তা এখন হবে কি না তা সময়ই বলবে।