ফাইল চিত্র।
মুনাফাবাজির অভিযোগ উঠছিল অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। তা বলে এক-একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ৩০-৪০ হাজার টাকা! এমন তথ্য পেয়ে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। অক্সিজেন ডিলারদের উপরে বাড়তি নজরদারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। কালোবাজারি রুখতে পৃথক দল গড়ে হঠাৎ-হানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব জেলা প্রশাসনকে।
রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। সিলিন্ডারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেই জন্যই বঙ্গবাসীর উপরে এমন বেয়াড়া দাম চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তারা। এক কর্তা বলেন, “একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য অসহায় রোগীর পরিবারকে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করতে হলে সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক, অমানবিক। এটা চলতে দেওয়া যায় না।”
সরকারি সূত্রের খবর, বাংলায় অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র আছে সাতটি। সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা (রিফিলিং) হয় মাত্র ২৪টি জায়গায়। করোনা আবহে সিলিন্ডারের ব্যাপক চাহিদার মুখে ২৪টি কেন্দ্র নিতান্তই অপ্রতুল। সব জেলায় এই ধরনের কেন্দ্র নেই। ফলে মানুষকে দূরবর্তী রিফিলিং কেন্দ্রে গিয়ে সিলিল্ডারে অক্সিজেন ভরতে হচ্ছে। এটারই সুযোগ নিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। “আগেকার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এমন রিফিল কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। প্রয়োজন যে মাত্রাছাড়া হয়ে উঠতে পারে, তখন তা অনুমান করা যায়নি। তাই সর্বত্র এমন পরিকাঠামো গড়েননি ব্যবসায়ীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পশ্চিম বর্ধমানে রিফিলিং কেন্দ্রের সংখ্যা যথেষ্ট। কিন্তু রাতারাতি অন্যান্য জেলায় এমন কেন্দ্র গড়া সম্ভব নয়। কারণ, তা সময় এবং খরচসাপেক্ষ। ফলে বিকল্প পদ্ধতি ভাবতেই হচ্ছে,” বলেন এক প্রশাসনিক কর্তা।
স্থির হয়েছে, জেলা ধরে ধরে অফিসারদের বিশেষ দল না-জানিয়ে হানা দেবে ডিলারদের ডেরায়। হঠাৎ গিয়ে ডিলারদের নথি পরীক্ষা করবেন অফিসারেরা। কার কাছে ক’টি সিলিন্ডার ছিল বা আছে, চাহিদা কেমন, কী ভাবে সিলিল্ডার দেওয়া হচ্ছে— সবই যাচাই করা হবে। এক প্রশাসনিক কর্তা বলেন, “উৎপাদক বা রিফিলিং কেন্দ্রে অবৈধ মজুতদারি হয় না। তার পরবর্তী ধাপেই মজুত করার প্রবণতা থাকে। তাই ডিলারদের ডেরা, এমনকি যে-সব ওষুধের দোকানে অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া দেওয়া হয়, মূলত সেগুলিকে নজরে রাখার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
রাজ্য সরকার আগেই জানিয়েছিল, অক্সিজেনের কালোবাজারি রুখতে অডিটে জোর দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ, অক্সিজেনের কালোবাজারি রুখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ ও এনফোর্সমেন্ট বিভাগকে। সেই কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। আচমকা হানাদারি শুরু হলে কালোবাজারি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে আশা করছে প্রশাসনিক মহল।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রাজ্যে এখন রোজ প্রায় ৫৬০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন উৎপাদিত হচ্ছে। দৈনিক চাহিদা রয়েছে ৪৭০ মেট্রিক টনের আশেপাশে। তাই কেন্দ্র যত অক্সিজেন আমদানি করবে, তার ১০% দিতে রাজ্যকে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যের জেলা ও মহকুমা স্তরে ১০৫টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পিএসএ প্লান্ট (অক্সিজেন) বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। লাল ফিতের ফাঁস এড়াতে এই পরিকাঠামো তৈরির স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে জেলা হাসপাতালগুলিকে। ডায়মন্ড হারবার ও কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজে প্লান্ট তৈরি হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবনের খবর, ১১২টি কোভিড হাসপাতালে পাইপলাইনে অক্সিজেন পরিষেবার সুবিধা রয়েছে। সেই পরিকাঠামোয় আরও অন্তত ২৫টি হাসপাতাল যুক্ত হয়েছে। যেখানে পাইপলাইনে অক্সিজেন পরিষেবা নেই, সেখানে তা চালু করার জন্য স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। শীঘ্রই ওই সব ক্ষেত্রে অক্সিজেন সিলিন্ডারের উপরে নির্ভরতা কমানো যাবে বলে আশা করছে রাজ্য প্রশাসন।