উচ্ছেদ অভিযানে পরিসর কমেছে দোকানের। নিজস্ব চিত্র
সৈকত শহরের ছোটখাটো চা দোকান। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঢুকে পড়েছিলেন সেখানে। নিজে হাতে চা-ও বানিয়েছিলেন। রাতারাতি শিরোনামে উঠে এসেছিল দিঘার ‘রাধারানি স্টোর্স’।
মাঝে চার মাস কেটেছে। ফের দিঘা সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যে ঠাঁইনাড়া হতে হয়েছে ‘রাধারানি’কে। সৈকতে উচ্ছেদ অভিযানের জেরে বেশ কিছুটা পিছিয়ে গিয়েছে দিঘা বিজ্ঞান কেন্দ্রের সামনের ওই চা দোকান। পরিসরও অনেকটাই ছোট হয়ে গিয়েছে। দোকানের মালিক পরিমল জানা বলছেন, ‘‘দিদি দোকানে পা রাখার পরে আমাদের কিছু একটা হিল্লে হবে ভেবেছিলাম। এ ভাবে সরকারি উচ্ছেদ অভিযানের শিকার হতে হবে ভাবিনি। তা ছাড়া, পুনর্বাসনটুকুও তো পেলাম না।’’
স্থানীয় পাল সুন্দ গ্রামের বাসিন্দা পরিমল ও তাঁর স্ত্রী চিন্ময়ী দু’জনে মিলেই দোকান চালান। চা ছাড়াও পাওয়া যায় রকমারি বিস্কুট, টোস্ট, ওমলেট। জানা দম্পতির বড় মেয়ে একাদশ শ্রেণির আর ছোট মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। গত অগস্টে মুখ্যমন্ত্রীর দোকানে ঢুকে চা বানানোর নানা মুহূর্তের ছবি বাঁধিয়ে দোকানে ঝুলিয়ে রেখেছেন পরিমল। তবে উচ্ছেদ অভিযানের পরে দোকান সরে যাওয়ায় আয়তন প্রায় অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। জিনিসপত্র মজুত করে রাখা যাচ্ছে না। অনেকেই পছন্দমতো জিনিস না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে রুজিতে টান পড়েছে। পরিমলের কথায়, ‘‘এই দোকানের ভরসাতেই সংসার চলে। কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি তাতে আর কত দিন চালাতে পারব বুঝতে পারছি না। আবার অভিযান হলে হয়তো পুরো দোকানটাই চলে যাবে।’’ পুনর্বাসনের জন্য ‘দিদিকে বলো’য় ফোন করেছেন পরিমল। পাশে থাকার আশ্বাস পেয়েছেন। তবে পুনর্বাসন পাননি।
আগামী সপ্তাহে দিঘায় শিল্প সম্মেলন। উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই উপলক্ষেই গত নভেম্বরে সৈকত শহরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। রাস্তার পাশের ওই চা-দোকানিকে সরে যেতে বলা হয়। তার পরে জাতীয় সড়কের পাশ থেকে দোকানের খানিকটা অংশ পরিমল নিজেই ভেঙে দেন। আর বাকি অংশটুকু রাস্তা থেকে কয়েক ফুট পিছনে সরিয়ে দিয়েছে প্রশাসন। পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘শিল্প সম্মেলনে আসা দেশ-বিদেশের অতিথিরা যাতে অসুবিধায় না পড়েন সে জন্য বিধি মেনেই দিঘায় উচ্ছেদ অভিযান করা হয়েছে।’’
কিন্তু পুনর্বাসন?
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, যে অস্থায়ী দোকানদারকে সরানো হয়েছে, তাঁদের পুনর্বাসনের বিষয়টি দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ দেখছে। পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারীও বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আর পরিমলেরা এখন যেখানে ব্যবসা করছেন, পর্ষদের তরফেই সেই জায়গা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে পুনর্বাসনের বিষয়টিও দেখা হবে।’’