—প্রতীকী ছবি।
ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি থেকে রিপোর্ট তৈরি, সবেতেই রয়েছে প্রশ্ন। আর জি কর কাণ্ডে ওই সব ধোঁয়াশা কাটাতে সহায়ক হতে পারে ১৫টি ছবি, যা ৯ অগস্ট সন্ধ্যায় ময়না তদন্তের সময়ে খুব কাছ থেকে মোবাইলের ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছিল। ওই সমস্ত ছবি দিল্লিতে ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য সিবিআই পাঠিয়েছে বলে খবর।
তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে ময়না তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ বার বার সামনে আসছে। আবার যে ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়েছে, তাতে মৃতের দেহের আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট না হওয়ায় তদন্তে সমস্যা হচ্ছে বলেও সিবিআই সূত্রের দাবি। ময়না তদন্তের ভিডিয়োগ্রাফি বিভিন্ন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে আঘাতের বিষয়ে নিশ্চিত একটা জায়গায় পৌঁছতে চাইছেন তদন্তকারীরা। এ জন্য দিল্লি এবং কল্যাণী এমসের ফরেন্সিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ওই ভিডিয়োগ্রাফি দেখানো হয়েছে। কিন্তু খুব স্পষ্ট কিছু বোঝা গিয়েছে, তেমনটা নয় বলেই খবর।
তরুণী চিকিৎসকের ময়না তদন্তকারী দলে তিন জনের এক জন সূর্যাস্তের পরে ময়না তদন্তে আপত্তি করেছিলেন। সূত্রের খবর, অন্যদের মতো তাঁকেও কয়েক বার তলব করেছে সিবিআই। তখন তিনি নিজে থেকেই তদন্তকারীদের ওই ১৫টি ছবির কথা জানান বলে খবর। এর পরেই তাঁর মোবাইলে থাকা ছবিগুলি সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রের খবর, ডিজিটাল ফরেন্সিকের মাপকাঠি অনুযায়ী প্রতিটি ছবি ঠিকঠাক তোলা হয়েছে এবং তা বিকৃত বা তাতে কারিকুরি করা হয়নি, এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই সেগুলি সংগ্রহ করা হয় এবং পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
সূর্যাস্তের পরে ময়না তদন্ত কেন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরেও ওই চিকিৎসক যখন দেখেন যে ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, বিষয়টি তাঁর কাছে গোলমেলে লেগেছিল বলেই জেনেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, তখন মর্গে হাজির অন্য এক চিকিৎসক-পড়ুয়াকে তিনি নিজের মোবাইলটি দিয়েছিলেন ছবি তোলার জন্য। মৃতের শরীরের বাইরের বিভিন্ন আঘাত, ব্যবচ্ছেদের পরে ভিতরের অংশের আঘাত, যৌনাঙ্গের ক্ষত এবং যে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই সমস্ত ছবি সামনে থেকে মোবাইল বন্দি করিয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকের মোবাইলে ছবিগুলি দেখে সেগুলি তদন্তে কাজে আসতে পারে বলেই মত প্রকাশ করেন তদন্তকারীরা।
রাজ্যে কাজ করা ফরেন্সিক মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিদেশের মতো এখানে ফরেন্সিক ভিডিয়োগ্রাফি সব সময়ে করা হয় না। কিংবা কী পদ্ধতিতে তা করতে হয় সেই প্রশিক্ষণ থাকে না ভিডিয়োগ্রাফারের। বিভিন্ন ময়না তদন্তে যে ভিডিয়োগ্রাফারদের নিয়ে আসা হয়, তাঁদের ব্যবস্থা করে পুলিশ। এক সিনিয়র ফরেন্সিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞের কথায়, “জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশানুযায়ী বিচারাধীন বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে, ময়না তদন্তে ভিডিয়োগ্রাফি বাধ্যতামূলক। সে ক্ষেত্রে অনেক সময়ে আমরা বলে দিই, কী ভাবে, কতটা সামনে থেকে কোন ছবি তুলতে হবে।” তিনি জানাচ্ছেন, অন্যান্য ক্ষেত্রে সাধারণত ময়না তদন্ত যেখানে হচ্ছে, তার কিছুটা দূর থেকে ভিডিয়োগ্রাফি করা হয়। সূত্রের খবর, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশিকায় বিচারাধীন বন্দির ক্ষেত্রে ‘স্টিল’ ছবির কথাও বলা রয়েছে। তবে সেটি অন্যান্য ক্ষেত্রে করা হয় না বললেই চলে।