ফাইল চিত্র।
কোর্সওয়ার্কে হাজিরা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগ তো আছেই। এর সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গবেষণাপত্রটি নিয়েও। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী যখন গবেষণা শেষ করেন, তখনই অভিযোগ উঠেছিল— সংশ্লিষ্ট গবেষণাপত্রে ৫০ শতাংশেরও বেশি বিষয়বস্তু তাঁর নিজস্ব নয়। কোথা থেকে সেই সব লেখা নেওয়া হয়েছে, তার ঋণ স্বীকারও করা হয়নি বলে অভিযোগ।
পার্থের গবেষণা নিয়ে অভিযোগ নতুন নয়। এর এক দিকে রয়েছে কোর্সওয়ার্কে তাঁর উপস্থিতি নিয়ে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ৪৮ দিনের কোর্সওয়ার্কে তিনি উপস্থিত ছিলেন মোট দু’দিন। এর সঙ্গে অভিযোগ, তাঁর ২২৬ পাতার গবেষণাপত্রটিও তিনি নিজে লেখেননি। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অধ্যাপককে মন্ত্রীর সেই গবেষণাপত্র লিখে ‘তৈরি’ করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কলকাতার ধর্মতলায় অভিজাত হোটেলে তাঁদের ডেকে পার্থের সঙ্গে কথাও বলানো হয়েছিল বলে একটি সূত্রের দাবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অধ্যাপক বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নিজে অধ্যাপক হয়ে ওই কাজ করতে মন সায় দেয়নি।’’ তা হলে শেষ পর্যন্ত কে লিখেছিলেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সূত্রেই দাবি, ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক এক শিক্ষককে দিয়ে সেই কাজ করানো হয়। পরবর্তী কালে তাঁকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চপদে বসানো হয় বলেও দাবি।
অভিযোগ অনুযায়ী, ওই গবেষণাপত্রটি অন্যকে দিয়ে নকল করানোর দায় বর্তায় পার্থের গাইড অনিল ভুঁইমালির উপরেও। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন অর্থনীতির অধ্যাপক এবং পরে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে আসীন অনিল ভুঁইমালি অবশ্য অন্য কাউকে দিয়ে টুকে গবেষণাপত্র তৈরির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘গবেষণাপত্র কোনও ভাবেই নকল করা নয়। পার্থ নিজেই লিখে আমাকে পাঠাতেন। ম্যানেজমেন্ট বিভাগের যে শিক্ষকের কথা বলা হচ্ছে, তিনিও আমার ছাত্র। তাঁকে পার্থের লেখা কম্পিউটারে তোলার জন্য অনুরোধ করলে তিনি সেটা সময় করে ‘কম্পোজ’ করে দিতেন মাত্র।’’ যাঁর বিরুদ্ধে গবেষণাপত্রটি লেখার অভিযোগ উঠেছে, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘এ সব অভিযোগ ঠিক নয়।’’ কলকাতার হোটেলে অধ্যাপকদের ডেকে গবেষণাপত্র লিখে দেওয়ার প্রস্তাবের কথাও ঠিক নয় বলে দাবি অনিল ভুঁইমালির। তিনি বলেন, ‘‘গবেষণাপত্র আমরা খতিয়ে দেখেছি। ২ শতাংশ নকল রয়েছে। যা অনুমোদনযোগ্য। কেন না, নিয়মের মধ্যেই ওই পরিমাণ অংশ কোনও জায়গা থেকে উল্লেখ করা যায়।’’
পার্থের গবেষণার বিষয় ছিল ‘ট্রান্সফর্মিং ইন্ডিয়ান ইকনমি টু নলেজ ইকনমি: দ্য রোল অব হিউম্যান রিসোর্স উইথ রেফারেন্স টু ইন্ডিয়া’। কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের মেয়ে আত্রেয়ী ঘোষ আগেই এই গবেষণা নিয়ে অভিযোগ তুলেছিলেন। অরুণাভের কথায়, ‘‘মেয়ে জেএনইউ-এর ছাত্রী হওয়ার সুবাদে গবেষণাপত্র কী ভাবে খতিয়ে দেখতে হয়, তা জানে। বিশেষ সফ্টওয়ারে তারা চেক করে দেখেছে, ৭৪ শতাশং নকল করে লেখা ওই গবেষণাপত্র। প্রকাশ্যেই সেই অভিযোগ করা হয়েছিল।’’
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সমর বিশ্বাস বলেন ‘‘অনিল ভুঁইমালির জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি এই জায়গায় পৌঁছেছে। যে পিএইডি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, তা বিভিন্ন জায়গা থেকে নকল করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চুক্তি-ভিত্তিতে থাকা এক শিক্ষককে দিয়ে লেখানো হয়েছে। অবিলম্বে এ সব ভাল ভাবে খতিয়ে দেখা দরকার।’’