প্রতীকী ছবি।
অতিমারিতে দুর্দশাগ্রস্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের আর্থিক সুরাহায় নানা ধরনের ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। কিন্তু তাঁদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণ তহবিল থাকলেও এ রাজ্যে তার ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বিরোধীরা তহবিল ব্যবহারের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তবে রাজ্য সরকারের দাবি, তাদের পদক্ষেপে উপকৃত হয়েছেন বিপুল সংখ্যক অসংগঠিত শ্রমিক।
নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ পর্ষদ তৈরি হয় ২০০৬ সালে। পরের বছর সংশ্লিষ্ট কল্যাণ তহবিলে সেস সংগ্রহ শুরু হয়। গোটা দেশের নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্র, রাজ্য বা ব্যক্তিগত স্তরে কোনও নির্মাণকাজ হলে তার খরচের অনুপাতে সেস জমা পড়ে ওই তহবিলে। এত দিনে তাতে বিপুল অর্থ জমেছে। অভিযোগ, লকডাউনের সময় কেন্দ্র সেই তহবিল থেকে নথিভুক্ত নির্মাণকর্মীদের টাকা দিতে বলা সত্ত্বেও রাজ্য তা মানেনি। রাজ্যের প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী এবং সিটু নেতা অনাদি সাহু বলেন, “আমাদের সরকারের সময়েই কল্যাণ তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা জমেছিল। এই আমলেও বহু টাকা জমা পড়েছে। কিন্তু কী ভাবে সেই অর্থ ব্যবহার করা হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। লকডাউনের সময় ঠিক ভাবে ওই তহবিল ব্যবহার করলে শ্রমিকদের সমস্যা কমত। আমরা এই নিয়ে শীঘ্রই আন্দোলন করব।”
অস্পষ্টতার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজ্য প্রশাসনের বক্তব্য, কেন্দ্র শুধু নির্দিষ্ট শ্রমিকদের আর্থিক সাহায্য দিতে বলছিল। রাজ্য সব ধরনের নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিককে সাহায্য করছে। প্রয়োজনের ভিত্তিতে সেই সহযোগিতা ভিন্ন ভিন্ন ধরনের। সরকারি ব্যাখ্যা: রাজ্যে নথিভুক্ত নির্মাণ শ্রমিকের সংখ্যা অন্তত ৪০ লক্ষ। অন্যান্য ক্ষেত্রের শ্রমিক মিলিয়ে রাজ্যে মোট নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিক আছেন অন্তত এক কোটি ২০ লক্ষ। তাই সম্মিলিত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প চালানো হচ্ছে। পেনশনের সুবিধা ছাড়াও তাতে আছে বৃত্তি, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মৃত্যুকালীন সুবিধাও। ৬০ বছরের বেশি বয়সের অন্তত ছ’হাজার নির্মাণ শ্রমিক মাসে ৭৫০ টাকা পেনশন পাচ্ছেন। ৪০ লক্ষের মধ্যে যাঁদেরই বয়স ৬০ বছর হচ্ছে, তাঁরা চলে আসছেন এই সুবিধার আওতায়। নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য পিএফের ব্যবস্থা আছে। তেমন কারও মৃত্যু হলে তাঁর পরিবার ৫০ হাজার বা দু’লক্ষ টাকা পায়। লকডাউনে অন্তত ২২ লক্ষ অসংগঠিত শ্রমিকের মাথাপিছু এককালীন এক হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা বাংলার কয়েক লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিককে আর্থিক সাহায্য দিতে চালু হয়েছিল ‘স্নেহের পরশ’ প্রকল্প।
এই অবস্থায় রাজ্যের পাল্টা অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী বিমা সুরক্ষা যোজনার কথা বললেও সেখানে ‘ক্লেম’ বা টাকা পেতে সমস্যা হয়। বরং পশ্চিমবঙ্গ সরকারই নিশ্চয়তা দিয়ে শ্রমিক-স্বার্থে এই কাজ করছে।
অনাদিবাবুর প্রশ্ন, এককালীন এক হাজার টাকায় কী হয়? প্রভিডেন্ট ফান্ডেও তো বিপুল অর্থ জমা হয়েছে। তাই দাবি জানানো হয়েছিল, লকডাউনে প্রত্যেক শ্রমিককে মাসে পাঁচ-ছ’হাজার টাকা দেওয়া হোক। তা দেওয়া হল না কেন?
প্রশাসনের এক কর্তার বিশ্লেষণ, শুধু নির্মাণ শ্রমিকদের সহযোগিতা করা হবে আর অন্যদের করা হবে না, এটা ঠিক পদক্ষেপ নয়। সরকার কখনও বিভাজন করতে পারে না। সেটা হলে সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যেত। তাই সব শ্রমিককে সাহায্য করা হচ্ছে। সেই জন্যই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের অবস্থানগত পার্থক্য তৈরি হয়েছে। ‘‘রাজ্যের পদক্ষেপে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক উপকৃত হচ্ছেন, বিশেষ করে লকডাউনের আবহে হওয়া ক্ষতির প্রশ্নে,” বলেন ওই কর্তা। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। ফোনের জবাব মেলেনি।