মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন অনন্ত মহারাজ সঙ্গে বিজেপির পরিষদীয় দল। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যসভার প্রার্থী হিসাবে ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর অনন্ত মহারাজকে মনোনীত করার দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুললেন রাজ্য বিজেপিরই অন্যতম মুখপাত্র দীপ্তিমান সেনগুপ্ত। সমাজমাধ্যমে ‘লাইভ’ করে এ ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন তোলেন তিনি। বিধানসভায় বৃহস্পতিবার অনন্তের পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি রথীন্দ্র বসু মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। বিজেপির দাবি, রথীন ‘ডামি’ প্রার্থী। কিন্তু অনন্ত এবং রথীন্দ্রের মতো ‘উত্তরবঙ্গের লোকদের’ মনোনয়ন নিয়ে বিজেপির একাংশে শুরু হয়েছে শোরগোল। যদিও রাজ্য নেতৃত্ব তাতে আমল দিতে চাননি।
কোচবিহারে ছিটমহল আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত দীপ্তিমান। তাঁর কথায়, অনন্ত রায় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন নগেন্দ্র রায় নামে। অথচ, পরিচয় দেন অনন্ত মহারাজ নামে। আসল নাম কোনটি? দীপ্তিমান প্রশ্ন তুলেছেন অনন্তের সমাজসেবা নিয়েও। তৃতীয় প্রশ্ন, অনন্ত আলাদা রাজ্যের দাবিদার, যা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সমর্থন করেন না বলে দাবি। এ ক্ষেত্রে কি অনন্ত তাঁর দাবি থেকে পিছোলেন, না বিজেপি নেতৃত্ব মত বদল করলেন?
দীপ্তিমান এ দিন বলেন, ‘‘রাজবংশী সমাজে বহু গুণীজন রয়েছেন, যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। তাঁদের কথা না ভেবে কেন অনন্তের কথা রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে ভাবা হল, তা স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।’’ বিজেপির রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণ অবশ্য দাবি করেন, ‘‘অনন্ত রাজবংশী সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করার লড়াই করেছেন। ওঁর ব্যক্তিগত মতামত যা-ই থাক, রাজবংশী সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি বলে বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে মনোনীত করেছেন।’’ তাঁর কথায়, দীপ্তিমানের মতামত ব্যক্তিগত। পৃথক রাজ্যের দাবি প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘বিজেপির অবস্থান হল, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় যে ভাবে পশ্চিমবঙ্গকে তৈরি করে দিয়েছিলেন, সে ভাবেই আমরা আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গকে তৈরি করতে চাই।” বিজেপির পরিষদীয় দল সূত্রের খবর, অনন্তের মনোনয়ন ‘স্ক্রুটিনি’র পরে চূড়ান্ত হলে, রথীনের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
বিজেপির উত্তরবঙ্গের এক নেতার কথায়, ‘‘দলটা কি উত্তরবঙ্গ-কেন্দ্রিক হয়ে গেল? দক্ষিণবঙ্গে কি যোগ্য নেতা নেই?” বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘রথীনদা দীর্ঘ দিনের নেতা। তাই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, স্বপন দাশগুপ্ত দক্ষিণবঙ্গের ছিলেন। তখন তো প্রশ্ন ওঠেনি!’’ কোচবিহার জেলা তৃণমূল প্রশ্ন তুলেছে অনন্তের পরিচয় নিয়ে। তৃণমূলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘অনন্ত অসমের মানুষ। উনি কোচবিহারবাসীদের রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার জন্য ব্যবহার করেছেন।’’ জবাবে এক গ্রেটার নেতা বলেন, ‘‘দেশের যে কোনও জায়গার মানুষ রাজ্যসভার সাংসদ হতে পারেন। বিতর্ক অর্থহীন।’’ অনন্তের মন্তব্য, ‘‘মূর্খের মতো কথা বলছেন যাঁরা, তাঁদের কথার উত্তর হয় না।’’