একা হাতুড়ে মনোজই ছিল ‘বনানী’র ভরসা

সাদামাঠা দোতলা বাড়ি। বাইরে দেওয়াল জোড়া সাইনবোর্ড। তাতে ভারী ডিগ্রির নামী চিকিৎসকদের তালিকা। সাইনবোর্ডে ফলাও ঘোষণা— ‘ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত দণ্ডনীয়। এই নার্সিংহোমে ভ্রণের লিঙ্গ নির্ধারণ হয় না’।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:১৪
Share:

অশোকনগরের সেই নার্সিংহোম। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সাদামাঠা দোতলা বাড়ি। বাইরে দেওয়াল জোড়া সাইনবোর্ড। তাতে ভারী ডিগ্রির নামী চিকিৎসকদের তালিকা। সাইনবোর্ডে ফলাও ঘোষণা— ‘ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ আইনত দণ্ডনীয়। এই নার্সিংহোমে ভ্রণের লিঙ্গ নির্ধারণ হয় না’।

Advertisement

কিন্তু সেই তালিকায় কোথাও নাম নেই মনোজ বিশ্বাসের। অথচ, শিশু বিক্রির তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, অশোকনগরের ‘বনানী’ নামে ওই নার্সিংহোমের একমাত্র চিকিৎসক ছিলেন হাতুড়ে মনোজই। গর্ভপাত আর সন্তান প্রসব ছাড়া ‘বনানী’তে আর কোনও চিকিৎসাই হত না। চলত ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ। ‘বনানী’র অনুমোদনও ছিল না।

ওই নার্সিংহোমের আড়ালে শিশু বিক্রির কারবার ফেঁদে বসার অভিযোগে শুক্রবার পুলিশ মনোজকে তো গ্রেফতার করেছেই, ধরা হয়েছে আরও চার জনকে। তাদের মধ্যে রয়েছে নার্সিংহোমের মালিক রঞ্জিতা রায়, কেয়ারটেকার রঞ্জিৎ দে এবং স্থানীয় দম্পতি গৌতম ও দীপা চন্দ। ‘বনানী’ থেকে ওই দম্পতির কেনা একটি শিশুর অসুস্থ হয়ে পড়ার জেরেই গোটা বিষয়টি সামনে আসে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘বনানী’র সাইনবোর্ডে যে চিকিৎসকদের নাম রয়েছে, তাঁদের খুঁজে হাবড়া থানায় দেখা করার নোটিস পাঠানো হচ্ছে। তদন্তে নেমেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগও।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পঁচিশ আগে নার্সিংহোমটি চালু হয়। পরে এলাকায় আরও নার্সিং‌হোম তৈরি হওয়ায় ধীরে ধীরে ‘বনানী’র পসার কমতে শুরু করে। বছর কয়েক আগে মারা যান নার্সিংহোমের মালিক অমল রায়। নার্সিংহোমটি বন্ধ হয়ে যায়। অমলের স্ত্রী রঞ্জিতা ফের তা চালু করেন। তখন ‘লিজ’ নেয় রঞ্জিৎ। কারবার চালাতে সে ‘নেটওয়ার্ক’ তৈরি করেছিল।

তদন্তকারীদের দাবি, রঞ্জিতের বেশ কিছু এজেন্ট রয়েছে। তারা বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, রেল স্টেশন, বাস-স্টপে নার্সিংহোমের প্রচার করত। এজেন্টরা ‘কেস’ প্রতি কমিশন পেত। গর্ভপাতের সময় পার হয়ে গিয়েছে, অথচ সন্তান চান না এমন মহিলারাই ছিলেন ‘টার্গেট’। এ রকম ক্ষেত্রে ‘কেস’ প্রতি এজেন্টরা ৫-৬ হাজার টাকা কমিশন পেতেন। অবাঞ্ছিত সন্তান প্রসবের জন্য অনেক ক্ষেত্রে টাকা নেওয়া হত না। তবে সদ্যোজাতদের তারা ৬০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকায় বিক্রি করত। সন্তানহীন অনেকেই এসে সেখানে সন্তানের জন্য নাম লেখাতেন। সেই তালিকায় ছিলেন গৌতম-দীপা চন্দও।

পুলিশ জানিয়েছে, গৌতমরা যে শিশুটিকে পেয়েছিল, কলকাতার এক মহিলা দিনদশেক আগে তার জন্ম দেন। কলকাতা-সহ অন্য জেলার মহিলারাও ‘বনানী’তে গর্ভপাত করাতে আসতেন। কিছুদিন আগে মনোজ সঙ্গী হিসেবে আর এক হাতুড়েকে পায়। তার খোঁজ চলছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement