টানা ২৪ ঘণ্টা পুরুলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্ধ রইল বিএসএনএলের পরিষেবা। বুধবার দুপুর থেকে বিএসএনএলের মোবাইল ও ল্যান্ডলাইন পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও ততক্ষণে বিস্তর ভোগান্তি হয়েছে গ্রাহকদের। পাশাপাশি ব্রডব্যান্ড পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কার্যত দু’দিন ধরে সমস্যায় পড়ে বিভিন্ন সরকারি অফিস ও ব্যাঙ্ক।
পুরুলিয়া জেলা টেলিকম আধিকারিক গৌতম মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বুধবার দুপুরে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে লিপানিয়ার কাছে এবং পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তায় কেন্দার কাছে রাস্তা তৈরির কাজ করার সময়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল কেটে যাওয়াতেই ওই বিপত্তি। তার জেরে রঘুনাথপুর মহকুমা ও মানবাজার এলাকায় ফোন-পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে পূর্ত দফতর এবং বিএসএনএল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চাপানউতোরও শুরু হয়েছে।
বিএসএনএলের পরিষেবা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে গ্রাহকদের। তারই মধ্যে রাস্তার কাজ করার সময়ে অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল কেটে যাওয়ায় ভোগান্তি চরমে ওঠে। রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লকেই পরিষেবা টানা এক দিন পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। বেশির ভাগ ব্যাঙ্কই ‘কোর ব্যাঙ্কিং’-এর আওতায় এসে পড়ায় ব্রডব্যান্ড পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার জেরে বুধবার দুপুর থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত কার্যত কোনও কাজই হয়নি ওই ধরনের ব্যাঙ্কগুলিতে। মাসের প্রথম দিকে ব্যাঙ্কে গিয়ে ক্যাশ কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন দিয়েও ‘লিঙ্ক ফেলিওর’ বোর্ড ঝুলতে দেখে ক্ষুব্ধ হয়েছেন গ্রাহকেরা। ব্যবসায়িক কাজে এ দিন সকালেই টাকা তুলতে আদ্রার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা অনিল প্রসাদ। তাঁর কথায়, “আজই টাকা তোলাটা খুব দরকার ছিল। ব্যাঙ্কে গিয়ে শুনতে হয়েছে ইন্টারনেট বন্ধ। বিকল্প ব্যবস্থাও নেই ব্যাঙ্কে।”
সমস্যায় পড়েছে সরকারি অফিসও। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, সমস্ত সরকারি অফিসেই বিএসএনএলের ব্রডব্যান্ড ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে বিভিন্ন কাজ অনলাইনেই করা হচ্ছে। কিন্তু, ব্রডব্যান্ড বন্ধ থাকায় এই ধরনের কাজগুলি পুরোপুরি বন্ধ ছিল। বিডিও (রঘুনাথপুর ১) সুনীতিকুমার গুছাইত বলেন, “যে কাজগুলি অনলাইনে সারা হয়, বুধবার দুপুরের পর থেকে তার কিছুই করতে পারেননি কর্মীরা।” কাশীপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, “ইন্দিরা আবাস যোজনায় উপভোক্তাদের তালিকা বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেলায় অনলাইনে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, ব্রডব্যান্ড বন্ধ থাকায় করা যায়নি। একই সমস্যা হয়েছে বিআরজিএফ প্রকল্পের পরিকল্পনা পাঠানোর ক্ষেত্রে।” সাঁতুড়ির বিডিও দিব্যেন্দুশেখর দাস আবার বলেন, “এমনিতেই সাঁতুড়ির প্রায় কোনও পঞ্চায়েতেই বিএসএনএলের পরিষেবা নেই। যেটুকু ছিল, গোটা একটা দিন ধরে তা-ও বন্ধ থাকায় প্রশাসনিক কাজে সমস্যা হয়েছে।”
এ দিন দুপুরের পর রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক হলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত তা স্বাভাবিক হয়নি মানবাজারে। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বিএসএনএলের গ্রাহক নিমাই রুইদাসের ক্ষোভ, “এমনিতেই বিএসএনএলের মোবাইল পরিষেবা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে আবার গোটা একটা দিন পরিষেবা বন্ধ রইল।”
এই বিপত্তির জন্য বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন পূর্ত দফতরের দিকে। জেলা টেলিকম আধিকারিক বলেন, “রাস্তা সংস্কারের কাজ করার সময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা সাবধানতা অবলম্বন করে কাজ করলেই রাস্তার পাশের অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল কাটা পড়ে না। কোথায় কোথায় ওই কেব্ল গিয়েছে, সেই বিষয়ে তথ্য আমরা আগাম দিয়ে রাখলেও তা মেনে কাজ করে না সংস্থাগুলি। ফলে মাঝেমধ্যেই বিপত্তি ঘটছে।” পূর্ত দফতরের পুরুলিয়ার এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তরুণকুমার চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, “রাস্তার পাশ দিয়ে ওই কেব্ল পাতার সময়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা আমাদের কাছে লে-আউট চায়। রাস্তার মাঝ থেকে দুই পাশে দশ মিটার দূরে আমরা সেই লে-আউট দিয়ে থাকি। কিন্তু, লিপানিয়ার যেখানে কেব্ল কাটা পড়েছে সেই এলাকাটি রাস্তার পিচের অংশের পাশেই।” তাঁর দাবি, বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ কখনওই তাঁদের জানাননি, রাস্তার কোথায় বা কত দূরে এই কেব্ল রয়েছে। “তা হলে কী সের ভিত্তিতে সাবধানতা অবলম্বন করবেন আমদের কর্মীরা।”প্রশ্ন তরুণবাবুর।