ভাঙচুরের পরে। —নিজস্ব চিত্র
হিমঘরে আলু রাখার চুক্তিপত্র সংগ্রহকে কেন্দ্র করে চাষিদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। যার জেরে আহত হল এক নাবালক। তাকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সমবায় হিমঘরের সামগ্রিক অব্যবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষকে দায়ী করে অফিসে ভাঙচুর এবং নথিতে আগুন ধরিয়ে দেন স্থানীয় চাষিদের একাংশ। পরে অবশ্য পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সোমবার সকালে ঘটনাটি ঘটে বোলপুরের মুলুক এলাকার উত্তর অজয় কৃষক সমবায় হিমঘরে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সমবায় হিমঘরে আলু রাখার জন্য স্থানীয় চাষিদের চুক্তিপত্র বা বন্ড দেওয়ার দিন ধার্য হয় সোমবার। বন্ড নেওয়ার জন্য রবিবার রাত থেকেই আশপাশ এলাকার চাষিরা লাইন দিতে শুরু করেন। এ দিন সকালে কয়েকশো চাষি হিমঘরের মূল গেটের সামনে জড়ো হন। স্থানীয় চাষিদের অভিযোগ, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকলেও, মূল গেট খোলেননি হিমঘর কর্তৃপক্ষ। সকাল আটটা নাগাদ চাষিদের ওই ভিড়ের ঠেলায় গেট ভেঙে যায়। তার পরেই চাষিরা হিমঘর চত্বরে ঢোকেন। তখনই পদপিষ্ট হয় স্থানীয় বড় শিমুলিয়ার বছর বারোর নজরুল শেখ। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বোলপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার অমিত মজুমদার বলেন, “পাঁজর, পা-সহ একাধিক জায়গায় আঘাত লেগেছে। পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আপাতত অবস্থা স্থিতিশীল।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তর অজয় সমবায় হিমঘরে আলু ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার বস্তা। ওই হিমঘরের সভাপতি সুভাষ ঘোষের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা গিয়েছে, চলতি বছর ২১ জানুয়ারি বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেয়ার হোল্ডার, আর স্থানীয় আলিচাষিদের আলু সংরক্ষণের জন্য দিন ধার্য করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, চলতি মাসের ৬ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত সমিতির শেয়ার হোল্ডারদের আলুর বন্ড দেওয়া হবে। অবশিষ্ট বন্ড দ্বিতীয় পর্যায়ে এলাকার চাষিদের দেওয়া হবে ২৩ তারিখ এবং বস্তা পিছু দশ টাকা দরে ওই চুক্তিপত্র দেওয়া হবে। আগে এলে আগে মিলবেsssss বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ থাকে। আর সেই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেই এ দিনের সমস্যা।
সভাপতি সুভাষবাবুর দাবি, “হিমঘরের মোট ধারণ ক্ষমতা ৬০ হাজার বস্তা। ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ শেয়ার হোল্ডারদের মধ্যে ৪৪ হাজার ৮৮০ বস্তার বন্ড দেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী তাঁদেরকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। বাকি থাকা প্রায় ১৬ হাজার বস্তার জন্য এ দিন এলাকার কৃষকদের মধ্যে বন্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।”
স্থানীয় চাষি শেখ খলিল, নাসিম আলি, শেখ রুপকেরা বলেন, “সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কয়েকশো চাষিকে একদিনে ডাকায় এহেন ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হল।” এক নাবালক আহতের ঘটনায় চাষিদের ক্ষোভে আগুন পড়ে। আর হিমঘর চত্বরে ঢুকে দফতরের তালাভেঙে ভাঙচুর করেন তাঁরা। কয়েক জন উত্যক্ত চাষি কালোবাজারীর অভিযোগ তুলে দফতরে ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন দেন নথিতে। কয়েকশো চাষির এহেন মারমুখি অবস্থা দেখেও পুলিশ কার্যত নিরব দর্শক হয়। কিছু পরে বোলপুরের টাউন দারোগা রতন সেন উত্তেজিত চাষিদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। পুলিশ এবং কৃষকদের একাংশের উদ্যোগে অবশ্য আগুন নেভানো হয় দফতরের নথিতে।
ওই হিমঘরের ম্যানেজার তপনকুমার সাঁই অবশ্য কালোবাজারির অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, “নিয়ম মতো বন্ড দেওয়া হয়েছে। শেয়ার হোল্ডারদের অগ্রাধিকার বরাবর দেওয়া হয়। তবে ধারণ ক্ষমতার বাইরে এত কৃষক এসে পড়বে আসা করিনি। মাত্র ১৪ হাজার বস্তার জন্য কৃষকদের বন্ড দেওয়ার কথা ছিল।” তবে এ দিনের ঘটনার জেরে বন্ড দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তপনবাবুর দাবি, “প্রাথমিক বৈঠকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হিমঘর এলাকা থেকে বন্ড দেওয়া বন্ধ করে স্থানীয় পঞ্চায়েতের মাধ্যমে চাষিদের বন্ড দেওয়া হবে। কিছু নথি, পেনড্রাইভ-সহ হিমঘরের কিছু জরুরি কাগজপত্র এ দিন পুড়ে গিয়েছে।”
এই হিমঘরে আলু রাখাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় চাষিদের এবং হিমঘর কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঝামেলা অবশ্য কোনও নতুন ঘটনা নয়। আলু উৎপাদনের তুলনায় হিমঘরে সংরক্ষণের পরিমাণ কম হওয়ায় এই ঘটনা গত বছরও ঘটেছিল। তাই নতুন হিমঘরের দাবি দীর্ঘদিনের। বোলপুরের এসডিপিও অম্লানকুসুম ঘোষ বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”