রাজ্যে রাহুর দশা চলছে। অবিলম্বে রাজ্যেকে এই দশা থেকে মুক্ত করতে হবে। রবিবার বোলপুরের রেল ময়দানে ‘সেভ ডেমোক্রেসি ফোরামে’র সভায় যোগ দিয়ে রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিকে এ ভাবেই বিশ্লেষণ করলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সভায় হাজির হয়ে নিজের গাড়িতে বসেই সোমনাথবাবু বলেন, “রাজ্যের স্বার্থে, সর্বোপরি শিল্প-শিক্ষা এবং মানুষের স্বার্থে, সকলকে ভাবতে হবে। কোন পথে গেলে এই রাহুর দশা থেকে রাজ্য মুক্ত হতে পারে, অবিলম্বে তার ব্যবস্থা করতে হবে।”
বস্তুত, এ দিন বিকেল তিনটে নাগাদ প্রথমে তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের খাসতালুকে সংগঠনের স্বতঃস্ফূর্ত মিছিল অনেককেই চমকে দেয়। হাজার খানেক মানুষ তাতে পা মেলান। মিছিল শেষে রেল ময়দানে ঘণ্টা খানেক ধরে চলে সভা। যোগ দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়, বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম অব্দুল্ল হালিম, অসীম চট্টোপাধ্যায়, অশোক বসু, আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান, শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল প্রমুখ। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মিছিলে না থাকলেও সভায় যোগ দিতে আসেন সোমনাথবাবু।
সভায় রাজ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। উঠে আসে পাড়ুই প্রসঙ্গও। অসীমবাবু বলেন, “সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর বীরভূমের পাড়ুই বোলপুর মহকুমায়। তাই কলকাতা থেকে জেলায় প্রথম কোনও কর্মসূচির জন্য বোলপুরকেই আমরা বেছে নিয়েছি।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্নীতি মুক্ত শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সকল স্তরের মানুষকে সরব হওয়ার আবেদনও করেন। আবার বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকারের বক্তব্যে উঠে এসেছে রাজ্যবাসীর ‘প্রায়শ্চিত্তে’র কথা। তিনি বলেন, “আগামী দিনে পশ্চিমবঙ্গের ভয়ঙ্কর বিপদ। আমি ‘বদলে দিন, পাল্টে দিন’ বলছি না। যাঁরা বলেছিলেন, তাঁরা আজ অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই তাঁরা এখন প্রায়শ্চিত্ত করছেন।” তাঁরই সঙ্গে সুর মেলান সুনন্দবাবুও। এক সময়ের এই ‘পরিবর্তনপন্থী’র অকপট স্বীকারোক্তি, “প্রায়শ্চিত্ত করতেই রাস্তায় নেমেছি। কামদুনি থেকে শুরু করে রাজ্যের সর্বত্র কেথাও-ই মানবিকতা নেই। মাওবাদী তকমা দেওয়া হচ্ছে। তাই প্রায়শ্চিত্ত করতে এসেছি।”
এ দিকে, বীরভূম জেলায় রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন অধ্যাপক অশোক বসু। তাঁর প্রশ্ন, “রাজ্যের এ কী চেহারা! বীরভূম মানেই কি সন্ত্রাসের জায়গা?” এর পরেই তাঁর সংযোজন, “কোথাও আইনের শাসন নেই। উদ্ধত প্রশাসন। কেউ গণতন্ত্র মানছেন না। রাজ্য সরকার মানবাধিকার কমিশনের সুপারিশও মানে না।” এই পরিস্থিতিতে তিনি এবং সমীর পুততুণ্ড সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন। সভায় রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন সিপিএম নেতা তথা আইনজীবী বিকাশবাবু। তাঁর বক্তব্য, “এ রাজ্যে কারও যন্ত্রণার কথা বলার সুযোগ নেই। পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র আক্রান্ত।” সোনালি গুহর প্রসঙ্গ তুলে সরকারের সমালোচনা করেছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার রাতে চড়াও হয়ে বলছেন ‘আই অ্যাম গভর্নমেন্ট’! সেখানে সাধারণ মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কোনও জায়গায় পৌঁছেছে, তা ভালই বোঝা যাচ্ছে।”
এ দিনই ওই সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় দফতরের সামনে অবস্থানরত পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করে আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। এ দিকে, জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই অধ্যাপিকা শেলি ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি গড়েছে বিশ্বভারতী। ওই কমিটিই এ বার থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলবে। অন্য দিকে, এ দিনই পাড়ুই থানার সাত্তোরে বিজেপি একটি পথসভা ও মিছিল করেছে। বিকেলে পাড়ুই আবার বিধায়ক চন্দ্রনাথ সিংহের নেতৃত্বে তৃণমূল শান্তি মিছিল বের করে।