সোনামুখীর সেই বুথে আজ আবার ভোট

নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ বলেন, “রবিবার ওই বুথে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে। তবে রাজ্যের পঞ্চম দফার নির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত। ওই বিধায়কের এখনও গ্রেফতার না হওয়া সে তুলনায় খুব নগণ্য বিষয়। আশা করি, জেলা প্রশাসন ব্যাপারটা দেখছে।” সুখেন্দুবাবু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খবর পেয়ে শনিবার তাঁর খোঁজখবর নেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৪ ০২:০৩
Share:

বিধায়কের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠায় বাঁকুড়ার সোনামুখীর সাহাপুরের সেই বুথে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। আজ, রবিবার ওই ভোট উপলক্ষে নিরাপত্তার কড়াকড়ি করছে জেলা প্রশাসন। যদিও গত বুধবার যে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়ের করা অভিযোগের জেরে এই ভোট, সেই সুখেন্দু রজক অবশ্য নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে খবর রয়েছে প্রশাসনের কাছে। ঘটনায় অভিযুক্ত সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাকেও পুলিশ শনিবার পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি।

Advertisement

নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পর্যবেক্ষক সুধীরকুমার রাকেশ বলেন, “রবিবার ওই বুথে পুনর্নির্বাচন হচ্ছে। তবে রাজ্যের পঞ্চম দফার নির্বাচন নিয়ে আমরা ব্যস্ত। ওই বিধায়কের এখনও গ্রেফতার না হওয়া সে তুলনায় খুব নগণ্য বিষয়। আশা করি, জেলা প্রশাসন ব্যাপারটা দেখছে।”

সুখেন্দুবাবু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন খবর পেয়ে শনিবার তাঁর খোঁজখবর নেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী। তাঁর আশ্বাস, “ওঁকে নিরাপত্তা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।” বহু চেষ্টাতেও সুখেন্দুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ঘনিষ্ঠদের দাবি, ভোট-পর্ব মিটে গেলে তাঁর বা তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার দায়িত্ব কে নেবে, তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় আছেন পেশায় শিক্ষক সুখেন্দু।

Advertisement

বুধবার চতুর্থ দফার নির্বাচনে বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের ওই বুথে (২৭ নম্বর) বিকেল ৪টে ৫ মিনিট নাগাদ ঢুকে সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহা ও তাঁর কুড়ি-পঁচিশ জন সঙ্গী ভোটকর্মীদের মারধর করে ৫৮টি ছাপ্পা ভোট দেন বলে অভিযোগ। গণ্ডগোলের পরেই প্রশাসন ওই বুথের ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেয়। নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো ঘটনা জানিয়ে পুনর্নির্বাচনের সুপারিশ করেন ওই কেন্দ্রের রিটার্নিং অফিসার পার্থ ঘোষ। সে দিন সন্ধ্যায় বুথের প্রিসাইডিং অফিসার সুখেন্দু-সহ ভোট-কর্মীরা সোনামুখী থানায় এফআইআর করেন। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা হয়।

পুলিশের দাবি, বিধায়ক পলাতক। তাই তাঁকে ধরা যাচ্ছে না। কিন্তু এ দিন সকালে এলাকায় রটে যায় যে জোর করে সুখেন্দুবাবুকে নিয়ে বিষ্ণুপুর আদালতে আসবেন দীপালি-ঘনিষ্ঠ শাসক দলের কিছু নেতা-কর্মী। চাপের মুখে আদালতে সুখেন্দু হলফনামা দেবেনবুধবারের হামলায় দীপালি উপস্থিত ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু হয়নি। তবে খবর যায় জেলাশাসকের কানে। তিনি বলেন, “জোর করে হলফনামা দেওয়ানো হবে বলে গুজব রটেছিল।” তাঁর সংযোজন, “সুখেন্দুবাবু একা হলফনামা দিলে লাভ নেই। ঘটনার অনেক সাক্ষী রয়েছেন। প্রশাসনের কাছেও যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।”

প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার ওই বুথে ভিডিও রেকর্ডিং করা হচ্ছিল। হামলাকারীরা বুথে ঢুকে প্রথমেই সেই ভিডিওগ্রাফারকে মারধর করে তাঁর ক্যামেরা ছিনিয়ে ছুড়ে ফেলে। সেই ক্যামেরা এবং গণ্ডগোলের সময় বুথের এক ভোটকর্মীর মোবাইলে করা ‘ভয়েস রেকর্ডিং’ বর্তমানে রয়েছে প্রশাসনের হেফাজতে। কিন্তু জেলা পুলিশ এখনও সে সব নিজেদের হেফাজতে চায়নি। কারণ জানতে মোবাইলে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও ফোন ধরেননি বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। এই প্রশ্ন এবং সুখেন্দুবাবুকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপার কী ভাবছেন জানতে চেয়ে এসএমএস করা হলেও জবাব আসেনি।

এই পরিস্থিতিতে জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে সুখেন্দুবাবুকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি করেছেন জেলার শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের তরফে এবিটিএ-র বাঁকুড়া সদর মহকুমার সম্পাদক দেবাশিস পান্ডার অভিযোগ, বিধায়কের বিরুদ্ধে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ করার পর থেকেই সুখেন্দুবাবুকে শাসকদলের লোকজন হুমকি দিচ্ছেন। দীপালিদেবীর দু’টি মোবাইলই বন্ধ। তবে শিক্ষক-মহলের অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খা।ঁ তাঁর কথায়, “আমাদের বদনাম করার চক্রান্ত চলছে।” তবে সোনামুখী ব্লক তৃণমূলের এক নেতার ক্ষোভ, “ওই বুথে আমাদের ভোটারই বেশি। তার পরেও এমন ঘটনায় দলের ভাবমূর্তিই প্রশ্নের মুখে পড়েছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement