স্ত্রীর অভিযোগে স্বামীর মৃতদেহ উঠল কবর থেকে

স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হল স্বামীর মৃতদেহ। মঙ্গলবার, সকালে নলহাটি থানার মহেশপুর গ্রাম থেকে নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও তাপস বিশ্বাস, নলহাটি থানার অফিসার ইনচার্জ সোমনাথ ভট্টাচার্য্য, চিকিৎসক সুভাষ পোদ্দারের উপস্থিতিতে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, অভিযোগকারী সখিনা বিবি এবং তাঁর পরিবারের লোকজন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নলহাটি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৭
Share:

স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হল স্বামীর মৃতদেহ। মঙ্গলবার, সকালে নলহাটি থানার মহেশপুর গ্রাম থেকে নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও তাপস বিশ্বাস, নলহাটি থানার অফিসার ইনচার্জ সোমনাথ ভট্টাচার্য্য, চিকিৎসক সুভাষ পোদ্দারের উপস্থিতিতে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। উপস্থিত ছিলেন, অভিযোগকারী সখিনা বিবি এবং তাঁর পরিবারের লোকজন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চার বছর আগে নলহাটি থানার কয়থা গ্রামের বাসিন্দা আজবাহার মল্লিকের মেয়ে সখিনা বিবির সঙ্গে ওই থানার মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আলাউদ্দিন সেখের ছেলে বাচ্চু সেখের বিয়ে হয়। বাচ্চু সেখ পেশায় টোকা, টিনের ড্রাম তৈরির মিস্ত্রি ছিল। তাঁদের আড়াই বছরের এবং তিনমাসের দুই মেয়ে রয়েছে। বিয়ের সাড়ে তিন বছর পর্যন্ত সখিনা বিবি তাঁদের নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকতেন। আট মাস আগে সখিনা বিবি তাঁর স্বামীর সঙ্গে আলাদা ভাবে থাকতে শুরু করেন। বাচ্চু সেখ কাজের জন্য এক মাসের জন্য উড়িষ্যা চলে যান। সখিনা তখন সাত মাসের গর্ভবতী বধূ। বাচ্চু সেখ ২২ ফেব্রুয়ারি বাড়ি ফেরেন।

এ দিন সখিনা বিবি বলেন, “স্বামী যখন বাড়ি ফিরেছিল, আমাকে কোনও কিছু জানায়নি। ২৩ ফেব্রুয়ারি শ্বশুরবাড়ি থেকে পাড়া প্রতিবেশির মাধ্যমে জানতে পারি, স্বামী মারা গিয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে দেখি, উঠোনে পড়ে আছে ওঁর মৃতদেহ। বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। সন্দেহ হয়, স্বামীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজনই মেরে খুন করেছে।” এরপরই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের দাবি করেন তিনি। কিন্তু তাঁর শ্বশুরবাড়ি তা করতে নিষেধ করে। বড় মেয়ের নামে তাঁর শ্বশুরবাড়ি কিছু জমি লিখে দিতেও চায়, বলে দাবি সখিনা বিবির। বলেন, “২১ মার্চ রামপুরহাট আদালতে শ্বশুর, শাশুড়ি, ভাসুর, জা, খুড়শ্বশুর এবং ননদাইয়ের বিরুদ্ধে স্বামীকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করি।” তাঁর দাবি, “স্বামী আর ভাসুর দু’জনে মিলে একটি মোটর বাইক কিনেছিল। কিন্তু বাইকের কাগজপত্র ভাসুর তাঁর নিজের নামে করে নিয়েছিল। এই নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হত। উনি উড়িষ্যা থেকে বাড়ি ফেরার পর ওর দাদার কাছে মোটর বাইক কেনার টাকা চেয়েছিল। সেইজন্য ওরা আমার স্বামীকে মেরে ফেলে দেয়।”

Advertisement

অন্যদিকে সখিনা বিবির শাশুড়ি বানু বিবি বলেন, “বাচ্চু গ্রামে ফেরার পর ওঁর শ্বশুড়বাড়ি গিয়েছিল। সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মারধর করেছিল। এরপর পাশের গ্রাম দেবগ্রামে মদ খেতে চলে যায়। মদ খেয়ে বাইক নিয়ে আসতে পারছিল না। বড় ছেলে নিয়ে আসে, উপরের ঘরে বিছানা করে দেয়। পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠছে না দেখে উপরের শোওয়ার ঘরে দেখি, ভিতর থেকে বন্ধ। দরজা ভেঙ্গে ঘরের ফ্যানের সঙ্গে পর্দার কাপড়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মৃত অবস্থায় বাচ্চুকে পাওয়া যায়।” তিনি দাবি করেন, “বৌমা আমাদের নামে মিথ্যে অভিযোগ করেছেন।”

এ দিন মৃতদেহটি উদ্ধারের সময় সখিনা বিবির শাশুড়ি বানু বিবি, দুই ননদ এছাড়া তাঁর বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন ছিলেন। উভয় পরিবার এবং গ্রামবাসী মৃতদেহটি উদ্ধারের পর শনাক্ত করেছেন বলে জানিয়েছেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে উপস্থিত থাকা নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও তাপস বিশ্বাস। তিনি বলেন, “গতকাল রামপুরহাট আদালত থেকে নির্দেশ পেয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। মৃতদেহ উদ্ধারের পর রামপুরহাট হাসপাতালে ময়নাতদন্তর জন্য পাঠানো হবে। তবে মৃতদেহের অবস্থা খারাপ থাকার জন্য রামপুরহাট হাসপাতালে ময়নাতদন্ত না করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে।” সখিনা বিবির বাবা আজবাহার সেখ বলেন, “গ্রামবাসীদের চাপে ময়নাতদন্ত করা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে জামাইকে মারধরের অভিযোগ ওরা করছে, তা মিথ্যা।” তিনি দাবি করেন, “২২ ফেব্রুয়ারি বাড়ির বাইরে ছিলাম। জামাইকে খুন করা হয়েছে এবং ঘটনার প্রকৃত তদন্তের জন্য আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement