লাভপুরের তৃণমূল কর্মী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলকে খুনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত গোপাল শেখ ও সালাম শেখকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বোলপুর আদালত। শুক্রবার অতিরক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী এই নির্দেশ দেন। সরকার পক্ষের আইনজীবী মহম্মদ সামসুজ্জোহা বলেন, “চিত্তরঞ্জন মণ্ডল খুনের ঘটনায় গোপাল শেখ ও সালাম শেখের অপরাধ প্রমানিত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী যাবজ্জীবনের নির্দেশ দিয়েছেন।”
সরকারি আইনজীবী জানান, ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর কাশিয়ারা গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয় সালাম শেখ। অন্যদিকে ২০১২ সালের ১৯ ডিসেম্বর চেন্নাই থেকে গ্রেফতার হয় গোপাল শেখ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোপাল শেখের আদি বাড়ি নানুরের সাওতা গ্রাম। তার বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মী অশোক ঘোষ খুন এবং সাওতা গ্রামেরই তৃণমূল নেতা সামশুর হুদাকে খুনের চেষ্টা সহ ২০-২৫ টি অভিযোগ রয়েছে নানুর থানায়। একসময় তাঁর সন্ধান দেওয়ার জন্য, ১০,০০০ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করে নানুর সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার দিয়েছিল জেলা পুলিশ। সিপিএম ক্ষমতায় থাকার সময়, গোপাল ছিল তাদেরই দলে।
সে সময়, এলাকা তথা রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলকে কেন্দ্র করে সাওতাতে আরএসপির সঙ্গে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিত গোপাল। পরে নানুর এলাকার আরএসপি কমী-সমর্থকরা তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় তার শ্বশুরবাড়ি কাশিয়ারা গ্রামে আশ্রয় নেয়। তারপরই সে এলাকার বিধায়ক মনিরুলের ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে বলে তৃণমূলের একাংশের দাবি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক পোলট্রি ফার্মের মালিক জানান, “গোপালের সঙ্গে তার বাকি শাগরেদেরও সাজা হলে খুশি হব। ওই সব শাগরেদদের নিয়ে গোপাল যখন তখন ফার্মে এসে পাঁচ-দশটা মুর্গি উঠিয়ে নিয়ে যেত। শুধু মুর্গি নয়, ওই মুর্গি রান্না করার খরচ বাবদও তিন চার-হাজার টাকা জবরদস্তি আদায় করে ছাড়ত। শাসক দলের বিধায়ক মনিরুল ইসলামের সঙ্গে ওর ওঠা বসা দেখে কোনওদিন পুলিশে অভিযোগ করার সাহস পর্যন্ত পায়নি মানুষ।”
চলতি বছর ৫ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী রাজীব ঘোষ, চিকিত্সক, তদন্তকারী অফিসার-সহ মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য নিয়েছেন আদালত। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১ ধারায় বেআইনি ভাবে আটকে রাখা, ৩০২ ধারায় খুন করা এবং ৩৪ ধারায় একই উদ্দেশ্যে চার্জ গঠন হয়। আজ শুক্রবার দু’জনের সাজা ঘোষণা করেছেন বিচারক।
এ দিন সাজা শোনার পর আদলত চত্বরে গোপাল শেখ বলেন, “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত নই।” আদালত চত্বরে তাঁকে খানিকটা হলেও ভেঙ্গে পড়তে দেখা গিয়েছে।
পরে গোপাল বলেন, “বাড়িতে এক মাত্র উপার্জন করতাম আমি। যার উপরে বৃদ্ধ বাবা রায়হান শেখ, মা মনোরা বিবি এবং স্ত্রী মনোকা বিবি এবং দুই শিশু কন্যা নির্ভরশীল। গ্রামে থাকলে কোনও না কোনও দল করতে হয়। আমি তৃণমূল করেছি, তাই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার। টাকা নেই, তবু উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছি।” আদালত চত্বরে তাঁর মা মনোরা বিবি বলেন, “ছেলে কি দোষ করেছে, জানি না। ফাঁসানো হয়েছে। পরিবারের কি হবে জানি না।”