সঙ্কীর্ণ লালপুলের জন্য প্রতিদিনই এ ভাবেই যানজট তৈরি হয়।
অবশেষে সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনের উপর লালপুল সম্প্রসারণ এবং সংস্কারে উদ্যোগী হল রেল কর্তৃপক্ষ। সব ঠিকঠাক থাকলে, মার্চের প্রথম থেকেই আনুষ্ঠানিক ভাবে লালপুল সম্প্রসারণের কাজ শুরু করবে রেল দফতর। শনিবার এই মর্মে লালপুল এলাকায় বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। রেলের নির্মাণ বিভাগের দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে, সেতুর দুই পাশের ২০০ ফুট পর্যন্ত বসবাসকারীদের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন সাতেকের মধ্যে জায়গা ফাঁকা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
সেতুর নির্মাণের কাজের স্বার্থে, ওই এলাকাগুলি খালি করার জন্য ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যেই বোলপুর মহকুমা পুলিশ, প্রশাসন, পুরসভা-সহ এলাকার একধিক মানুষজনদের নিয়ে একটি বৈঠকও করেছেন। প্রসঙ্গত, শহরের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লালপুলের ওপর চাপ পড়ত। নিত্যদিন শহরের বাসিন্দাদের পাশাপাশি এই রাস্তার ওপর নির্ভরশীল একাধিক জেলায় যাওয়া রুটের বাস এবং অন্যান্য গাড়ির আকছার যানজটে নাকাল হতেন যাত্রীরাও।
বহুবার এই সংকীর্ণ সেতু সংস্কারের জন্য আবেদন নিবেদন হয়েছে। বার কয়েক মাপজোক করে গিয়েছেন, পূর্ব রেলের কর্মকর্তারাও। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে সংকীর্ণ লালপুল সংস্কারের কাজ বছরের পর বছর আটকে ছিল। রেল মন্ত্রীত্ব বদলের সঙ্গে সঙ্গে আবেদনও বহুবার গিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে। কিন্তু কাজ হয়নি। এলাকার নাগরিক সমিতি থেকে শুরু করে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষজন বারে বারে দ্বারস্থ হয়েছেন সংশ্লিষ্ট রেলমন্ত্রকে। দরবার করা হয়েছে লোকসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কাছেও। চিঠি পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছেও। গ্রামের বাড়ি মিরাটি এসে বা বোলপুর-শান্তিনিকেতনে কোনও অনুষ্ঠান থাকলে, তাঁরও কনভয় এই লালপুলের ওপর দিয়েই যায় কখনও সখনও।
ঘটনা হল, সাপ্তাহিক ছুটির দিন রবিবার ছাড়া, বাকি দিনগুলিতে এই লালপুলের ওপর প্রতি নিয়ত যানজট লেগেই থাকে। বোলপুরের মকরমপুরের বাসিন্দা, বোলপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুলতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খুব সাধু উদ্যোগ এই সেতু সংস্কারের কাজ। খুবই প্রয়োজন ছিল। কারণ, স্কুল যাতায়তের পথে যানজটে আটকে, প্রায় দেরি হত। দ্রুত সংস্কার হলে, খুব ভাল হয়। প্রয়োজনীয় বিকল্প ব্যবস্থা না হলে সমস্যার মুখে পড়তে হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা ওই লালপুলের ওপর রোজ নির্ভরশীল নীলাদ্রি চক্রবর্তী বলেন, “লালপুলের সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যে নেওয়া হয়েছে, তা খুবই ভোগান্তি কাটাবে। সংস্কারের সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা করুক।”
বৃহস্পতিবার বোলপুরের মহকুমা শাসক মলয় হালদারের সভাকক্ষে রেলের নির্মাণ বিভাগের আধিকারিকেরা, পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান, সমস্ত রাজনৈতিক দল, বড়গাড়ির মালিক সমিতি বৈঠক হয়। পুরপ্রধান সুশান্ত ভকত বলেন, “ইতিমধ্যেই ১৩ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে। প্রায় ১২ মিটারের এই সেতু হচ্ছে। দু’দিক থেকে গাড়ি চলাচল করা-সহ সেতুতে ফুটপাথও থাকবে।”
সম্প্রসারণের কাজ চলাকালীন যাতে অসুবিধে না হয়, তার জন্য আরও একটি বৈঠক হবে। কাজ যেহেতু পয়লা মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হচ্ছে, তার জন্য তার আগেই প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রেল লাইনের ধারে এবং রেলের জায়গায় বসবাসকারী সেতু সংলগ্ন বস্তির কিছু বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় বসবাসের জন্য এ দিনের বৈঠকে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এবং বিরোধী দল। আলোচনা হয়, স্কুল, কলেজ, পড়ুয়া এবং বাসিন্দাদের যাতায়তের যাতে অসুবিধা না হয়, সেটিও খেয়াল রাখা হবে।
—নিজস্ব চিত্র।