বিজেপির প্রতিনিধি দল মন্যাডি গ্রামে। রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের লোকেদের হামলার নিদর্শন হিসেবে বিজেপি-র রাজ্য প্রতিনিধিদের রক্তমাখা লাঠি দেখালেন মন্যাডির দলীয় কর্মীদের পরিজনেরা। আর হাসপাতালে সাংসদকে সামনে পেয়ে বিজেপি কী ভাবে বাড়ি ঘিরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁদের উপর চড়াও হয়েছিল সে কথা জানালেন আহত তৃণমূল কর্মীরা।
বাঁকুড়া সদর থানার মন্যাডি গ্রাম শনিবার তৃণমূল ও বিজেপি-র সংঘর্ষের পর থেকেই কার্যত পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। গ্রামে চলছে পুলিশি টহল। শনিবার রাতেই ওই হামলায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ দু’তরফের মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে ছ’জনই হাসপাতালে ভর্তি। রবিবার সকালে বাঁকুড়া মেডিক্যালের মেল সার্জিকাল ও লকআপে থাকা দলীয় কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। ছিলেন বিজেপি-র অন্যতম দুই রাজ্য সাধারণ সম্পাদক শমীক ভট্টাচার্য ও রবীন চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা মন্যাডি গ্রামেও যান। সন্ধ্যায় বাঁকুড়ার সাংসদ মুনমুন সেন, সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীকে সঙ্গে নিয়ে বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকা আহত দলীয় কর্মীদের দেখতে যান। এই জেলায় তিনি আগে এসেছেন ভোটের প্রচারে। এ বার সাংসদ হয়ে সরাসরি নেমে পড়লেন রাজনীতির মাটিতে। আহত কর্মীদের চিকিৎসা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, ঘটনার বিবরণ প্রভৃতি তিনি খুঁটিয়ে জানতে চান। আহত কর্মীরা তো বটেই, তিনি সরাসরিতে মাটিতে নেমে রাজনীতি করতে আসায় উৎসাহ পেয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের নীচুস্তরের কর্মী-সমর্থকেরাও।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মন্যাডি গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মন্যাডির বাসিন্দা চার তৃণমূল কর্মী হলেন বাউড়িদাস গড়াই, মথুর গড়াই, শিবদাস গড়াই ও আকর গড়াই। বাকি দু’জন হলেন বিজেপি-র তাপস মণ্ডল ও ঈশ্বর গড়াই। ঘটনার পরে গ্রাম থেকে আটক বিজেপি কর্মী হৃষিকেশ গড়াই, নেপাল গড়াই, আকুল গড়াই, নেপাল গড়াই ও বদরিক মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার ওই পাঁচজনকে বাঁকুড়া আদালত ধৃতদের ১৪ দিনের জেল হাজতে পাঠায়।
মন্যাডি গ্রামে বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্বের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন আহত বিজেপি কর্মীদের বাড়ির লোকজনেরা। সংঘর্ষে গুরুতর আহত কার্তিক মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা মণ্ডল তাঁদের কাছে দাবি করেন, “ক’দিন ধরেই তৃণমূলের লোকজন ওকে মারবে বলে তাক করেই ছিল। ওরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার স্বামীর মাথায় কোপ মারল। ওকে বাঁচান।” আর এক আহত কর্মী ভৈরব গড়াইয়ের স্ত্রী সুমিত্রা গড়াই একটি রক্তাক্ত বাঁশ হাতে করে নিয়ে এসে রাজ্য নেতাদের দেখিয়ে অভিযোগ করেন, “এই মোটা বাঁশটা দিয়ে তৃণমূলের লোকেরা আমার স্বামীকে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে।” তিনি প্রশ্ন করেন, “আমার স্বামী বাঁচবে তো?” বিজেপি কর্মীদের বাড়ির লোকজন জানান, ওই প্রতিনিধি দল আসবেন জানতে পেরে এলাকার মহিলা তৃণমূল কর্মীরা তাঁদের শাসিয়ে গিয়েছে। ওই দল চলে গেলেই দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে গিয়েছে ওরা।
২১ দিনের নাতিকে কোলে নিয়ে আহত বিজেপি কর্মী ঈশ্বর গড়াইয়ের মা মুক্তাদেবী শমীকবাবুদের আর্জি জানান, “আমার ছেলের হাত কেটে দিয়েছে। ও যদি পঙ্গু হয়ে যায় তাহলে আমরা আর বাঁচব না।” তাঁরা অভিযোগ করেন, ঝামেলা করার জন্য কিছু দিন ধরে মদ খেয়ে তৃণমূলের লোকেরা বিজেপি কর্মীদের গালিগালাজ করে প্ররোচনা দিচ্ছিল। তবে তৃণমূলের বাঁকুড়া ব্লক ১ সভাপতি ধবল মণ্ডলের পাল্টা দাবি, “বিজেপিই এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে। আমাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ভিত্তিহীন।” এ দিকে হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতার করার প্রতিবাদ জানিয়েছেন দলের রাজ্য সহ সভাপতি সুভাষ সরকার। তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁদের হাসপাতাল লকআপে রাখা হয়েছে। এতে তাঁদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত ঘটছে।” পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “পক্ষপাতের অভিযোগ ঠিক নয়। দু’পক্ষই অভিযোগ করেছে। জামিন অযোগ্য ধারা দিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।” শমীকবাবু বলেন, “মানুষ বিজেপির দিকে ঝুঁকছেন বলেই রাজ্য জুড়েই আক্রমণাত্মক রূপ নিয়েছে তৃণমূল। তবে এ ভাবে মানুষকে তাঁরা আটকাতে পারবেন না।”