মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সূত্র ধরে রাজস্থানের একটি প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক নাবালিকা ও এক যুবতীকে উদ্ধার করে আনল সিউড়ির পুলিশ। পাচার করতে তাঁদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বলে পুলিশের দাবি। সোমবার রাতে পুলিশ তাঁদের ফিরিয়ে আনে। মঙ্গলবার সিউড়ি আদালত ওই যুবতীকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়। মুর্শিদাবাদের ওই কিশোরীকে সিউড়ির মহকুমাশাসক একটি হোমে রাখার নির্দেশ দেন।
সিউড়ির একটি গ্রামে বছর পঁচিশের ওই বধূ দুই সন্তান নিয়ে মায়ের কাছে থাকতেন। তাঁর স্বামী উত্তরপ্রদেশে থাকেন। সংসার চালানোর জন্য তিনি বর্ধমান শহর থেকে কাঁচের চুড়ি, কসমেটিক্স ইত্যাদি কিনে এনে গ্রামে বিক্রি করতেন। ৩১ মে বর্ধমানে গিয়ে তিনি আর ফেরেননি। খোঁজ না পেয়ে কয়েক দিন পরে তাঁর বৃদ্ধা মা থানায় মেয়ের নামে নিখোঁজের ডায়েরি করেন। আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে বিস্তর খোঁজ করেও মেয়ের খবর না পেয়ে ৬ জুন তিনি পুলিশের কাছে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।
ওই বধূর সঙ্গে তাঁর মোবাইল ফোন ছিল। সেটিই ছিল ওই বধূকে খুঁজে পাওয়ার একমাত্র হাতিয়ার। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ওই বধূর মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশান দিল্লি ও রাজস্থানের বিভিন্ন এলাকা দেখাচ্ছিল। কিন্তু সেখানে গেলেই যে ওই বধূর হদিশ পাওয়া যাবে সে নিশ্চয়তা ছিল না। মোবাইলের টাওয়ারের লোকেশান এবং অন্যান্য সূত্র ধরে তদন্তে এগোতে থাকে পুলিশ। বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ পাল বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে শেষে শুক্রবার রাতে রাজস্থানের জয়পুরের সঙ্গনীর ইস্ট পি এস এলাকা থেকে ওই বধূকে উদ্ধার করে। ওই এলাকাতেই আগে আপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বহরমপুর এলাকার এক কিশোরীকে। খোঁজ পেয়ে তাকে পুলিশ নিয়ে এসেছে।”
কী ভাবে বর্ধমান থেকে বধূটি রাজস্থানে পৌঁছাল? পুলিশের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান স্টেশনে কয়েকজন যুবক ওই বধূর সঙ্গে আলাপ জমিয়ে তাঁকে ভাল রোজগারের কথা শুনিয়েছিল। গল্পগাছার ফাঁকেই তারা ওই মহিলাকে কিছু খাওয়ায় এবং তারপরেই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর তাঁর জ্ঞান ফেরে রাজস্থানে। সেখানে একটি গ্রামে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেখানেও তাঁকে বেশিদিন রাখা হয়নি। নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে। কিছু দিন সেখানে রেখে ফের রাজস্থানের একটি গ্রামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই ছিল বহরমপুরের ওই কিশোরী। তাকেও একমাস আগে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মেয়েকে ফিরে পেয়ে এ দিন সিউড়ি আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধা মা। বৃদ্ধা বলেন, “দু’টি সন্তানের জন্মের পরে প্রথম জামাই অকালে মারা যায়। পরে উত্তরপ্রদেশে মেয়ের বিয়ে দিই। কিন্তু মেয়ে এখানে থেকে যায়। সংসার চালাতে খুব পরিশ্রম করত। কিন্তু দুষ্টু লোকেরা যে ওকে তুলে নিয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।” তিনি জানান, মেয়ের দুই শিশু ক’দিন ধরে মা মা করে শুধুই কান্নাকাটি করে গিয়েছে। মেয়ের চিন্তায় তাঁর ঘুম উড়ে গিয়েছিল। কোনও দিন মেয়েকে ফেরত পাবেন তা ভাবতে পারেননি।
অন্য দিকে, ওই নাবালিকা পুলিশকে জানিয়েছে, এক বান্ধবী তাকে কাজ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘর থেকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। এখন সে পরিবারের কাছে ফিরতে চেয়ে কান্নাকাটি করেছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই নাবালিকার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।