দোতলা বাড়ির ভাড়াটেরা যে গোপনে ঘরের ভিতরই অস্ত্র গবেষণাগার তৈরি করেছিল, অষ্টমীর মাঝ দুপুর পর্যন্ত টেরও পায়নি খাগড়াগড়! ‘জানতেন না’ বলে দাবি করছেন বাড়ির মালিকও!
২ অক্টোবর বিস্ফোরণের জেরে নাশকতার ছক সামনে আসার পরে বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন করে নড়াচড়া শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনে। এবং সেই নড়াচড়ার সৌজন্যে আরও একবার জানা যাচ্ছে, নতুন ভাড়াটে নিয়ে থানায় তথ্য জানানোর নিয়ম থাকলেও সে নিয়ে কোনও পক্ষই আগ্রহ দেখায়নি এত দিন। পুলিশ যেমন উদাসীন থেকেছে, নতুন ভাড়াটে নিয়ে থানায় তথ্য দেওয়ার ব্যাপারে ততটাই অনাগ্রহ দেখা যায় বড়িওয়ালাদের মধ্যে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিভিন্ন জেলার পুলিশ ভাড়াটেদের তথ্য নিয়ে নাড়াঘাঁটা শুরু করেছে। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও। খাগড়াগড়-কাণ্ডের পরে এই জেলার পুলিশ তড়িঘড়ি ভাড়াটেদের উপরে কড়া নজর রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বোলপুর শহরে এমনই বাড়িওয়াওলাদের পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, ভাড়াটিয়াদের পরিচয়পত্র থানায় জমা দিতে হবে। এ বিষয়ে শহরের হোটেল ও লজ মালিকদের সঙ্গেও কথা বলছে তারা। শহরের যে সমস্ত বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়, তার মালিকদের তালিকা তৈরির কাজও প্রাথমিক ভাবে শুরু হয়েছে। বোলপুর-শান্তিনিকেতন আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত বলে, বিশেষ ভাবে প্রশাসন নজরদারি বাড়িয়েছে। ঘটনা হল, বর্ধমানের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে পুলিশের হাতে নানা তথ্যও উঠে আসছে। বোলপুরের কয়েকটি পাড়ায় বহিরাগত যুবকদের সন্দেহজনক আনাগোনাও খতিয়ে দেখছে তারা।
বোলপুরের দর্জিপাড়ার এলাকার জৈনিক বাড়ি মালিক বলেন, “এমন নিয়ম রয়েছে জানি না। কে বাড়ি নিচ্ছে সে সব জেনেই ভাড়া দিই। তবে পুলিশকে জানাতে হবে, জানতাম না। এখন যা ঘটছে, তাতে আমরাও আতঙ্কিত। পুলিশকে সাহায্য করব।” শান্তিনিকেতনের গুরুপল্লি, উত্তরপল্লি ও বোলপুরের নতুন পুকুরের বাসিন্দাদের বক্তব্যও একইরকম।
ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়িতে ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এতদিন নিয়ম মানা হয়নি বলে তথ্য উঠে আসছে পুলিসের হাতে। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের নাকের ডগায়, এমন বেআইনি ভাবে একাধিক বাড়িতে বহিরাগতরা আকছার থাকে বলে গোয়েন্দা বিভাগের দাবি। বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায়, মঙ্গলবার সকাল থেকে এমনই বেশ কিছু বাড়ির হদিশ পেয়েছে পুলিশ। ওই বাড়িতে আসাযাওয়া করা মানুষজনের গতিবিধির ওপর নজরদারি চালানোর পাশাপাশি কারা ওই সমস্ত বাড়িতে আনাগোনা করছে তার খোঁজও নিচ্ছেন জেলা পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
বোলপুরের এসডিপিও সূর্য প্রতাপ যাদব বলেন, “উপযুক্ত পরিচয়পত্র যাচাই করে হোটেল বা বাড়িতে ভাড়া দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। পাশাপাশি বাড়িতে দেশী-বিদেশী ভাড়াটে থাকলে তার খবর সংশ্লিষ্ট থানায় দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক বাড়ি ও হোটেল রয়েছে, যেখানে বেশি টাকার বিনিময়ে কোনও পরিচয় যাচাই করা হয় না। আবার পুলিশের কাছেও তেমন খবর পৌঁছায় না। সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শান্তিনিকেতন এলাকায় বহু বাড়িতে কেয়ারটেকাররা, বাড়ি মালিককে কখনও জানিয়ে, কখনও বা না জানিয়ে ঘর ভাড়া দিয়ে থাকেন। পুলিশ খতিয়ে দেখছে সে সবও। ইদানিং কালে বোলপুর পুরসভার বেশ কিছু এলাকায় এমন বাড়ির হদিশ মিলেছে বলে জেলা পুলিশ জানাচ্ছে। বোলপুর পুরসভা এবং বেশ কিছু বর্ধিত এলাকায় এমন বেশ কিছু বাড়ি মালিককে তাঁরা চিহ্নিতও করেছেন। জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, যারা উপযুক্ত কাগজপত্র ছাড়া দেশি-বিদেশী ভাড়াটেদের বাড়ি ভাড়া দেন, তাঁদের সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
পাশাপাশি এমনই বেশ কিছু বাড়ির হদিশ পেয়েছে জেলার গোয়েন্দা-পুলিশ যেখানে ব্যবসার নামে বোর্ড ঝোলানো থাকলেও, আদতে কোনও ব্যবসার কাজ হয় না। কারা ওই সব বাড়িতে আসা-যাওয়া করেন, পুলিশ ওই সমস্ত এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছেন, সে নিয়েও। যদিও এই বিষয় নিয়ে বোলপুরের এসডিপিও কোনও মন্তব্য করতে চাননি।