ভোটের এক মাস আগেই পথে বাহিনী

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই প্রচারে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার, মিছিলও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ভোট হতে এখনও অনেক দিন বাকি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীও এসে পৌঁছয়নি। ইতিমধ্যে জেলায় যে চার কোম্পানি বাহিনী রয়েছে তা দিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে নজরদারি, রুটমার্চ, চেকিং।

Advertisement

ভাস্করজ্যোতি মজুমদার

সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০০:০০
Share:

কড়া নজরদারি। সিউড়ি ২ ব্লকের পুরন্দরপুরের কাছে তোলা নিজস্ব চিত্র।

নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা হতেই প্রচারে নেমে পড়েছে রাজনৈতিক দলগুলি। নিজ নিজ দলের প্রার্থীদের নিয়ে প্রচার, মিছিলও শুরু হয়ে গিয়েছে। তবে ভোট হতে এখনও অনেক দিন বাকি। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে কেন্দ্রীয় বাহিনীও এসে পৌঁছয়নি। ইতিমধ্যে জেলায় যে চার কোম্পানি বাহিনী রয়েছে তা দিয়েই শুরু হয়ে গিয়েছে নজরদারি, রুটমার্চ, চেকিং। কিন্তু এই রকম ভাবে এত আগে থেকে এত কড়াকড়ি গত নির্বাচনগুলিতে দেখা যায়নি। জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, “নির্বিঘ্নে নির্বাচন করতেই আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

কিন্তু কেন?

সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ লোকসভা নির্বাচন করতে গত ১২ মার্চ পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের তিন জেলা দুমকা,পাকুড় ও জামতাড়া এবং প্রতিবেশি জেলা মুর্শিদাবাদ ও বর্ধামানের পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বীরভূমের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বৈঠক হয়েছে জেলায়। নির্বাচন চলাকালীন বা নির্বাচনের আগে জেলার সীমারেখা যাতে পুরোপুরি বন্ধ রাখা যায় সেটা সুনিশ্চিত করতে আলোচনা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বীরভূম জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা। এ ছাড়াও মাওবাদী সমস্যা নিয়ে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে আন্তঃরাজ্য ও পড়শি জেলাগুলির সঙ্গে মতবিনিময় ও যৌথ অভিযানের বিষয়েও কথাবার্তা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন এসপি আলোক রাজোরিয়া। ওই বৈঠকের দিন কয়েক পর থেকেই জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় শুরু হয়েছে টহল। কোথাও কেন্দ্রীয় বাহিনী, কোথাও রাজ্যপুলিশ, কমব্যাট ফোর্স দিয়ে।

Advertisement


সাঁইথিয়ার বাগডাঙার কাছে তোলা নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ-প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এমনিতেই খয়রাশোল, কাঁকরতলা, রাজনগর, দুবরাজপুর, মহম্মদবাজার, রামপুরহাট নলহাটি-সহ মোট ৯টি থানা এলাকা মাও-প্রভাবিত বলে ঘোষিত। ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত রাজনগর ও খয়রাশোলে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় মাওবাদীদের হাত রয়েছে দাবি করেছিল পুলিশ। ওই সময় প্রশাসন একটু কড়াকড়ি করলেও ২০১১ সালের পর থেকে সেই তৎপরতা নজরে পড়েনি। কিন্তু ২০১২ সালের শেষের দিকে পড়শি রাজ্য লাগোয়া থানা এলাকায় ‘মাও গতিবিধি’ নজরে আসার পরে বাহিনীর জন্য আবেদন জানায় বীরভূম জেলা পুলিশ। গত বছর জুলাইয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে পাকুড়ের পুলিশ সুপার-সহ ছয় পুলিশকে হত্যা করেছিল মাওবাদীরা। তারপরই চার কোম্পানী কেন্দ্রীয় বাহিনী পায় বীরভূম। খয়রাশোল, কাঁকরতলা, মহম্মদবাজার ও নলহাটিএই চারটি থানা এলাকায় রয়েছে বাহিনীগুলি। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, তাই নাশকতামূলক কাজকর্ম রুখতে হাতে থাকা বাহিনীকে দিয়েই আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

শুধু কি এই কারণের জন্য আগে থেকে এত কড়াকড়ি?

এ দিকে, ভোট যত এগিয়ে আসছে, মুখে একে অপরকে আক্রমণ তো চলছেই। দেওয়াল লিখনকে কেন্দ্র করে টকঝালও শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক দিন আগে সাঁইথিয়ার চাঁদপুর গ্রামে তৃণমূলের দেওয়াল লিখনে গোবর লেপে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিপিএমের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল। এরকম ছোট ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিউড়ি, রামপুরহাট, বোলপুর এলাকাতেও বিভিন্ন দলের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। সিউড়ির তিলপাড়া ও পুরন্দপুরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দেওয়াল লিখন মুছে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ সিপিএমের। বিজেপিও তৃণমূলের বিরুদ্ধে ময়ূরেশ্বরের ষাটপলশা, নামোপাড়া দেওয়াল মুছে দেওয়ার অভিযোগ করেছে। প্রসঙ্গত, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে চোখ রাঙানি ও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল পুলিশ প্রশাসনকে। এই সব ঝামেলা আটকাতে এত আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চোলাই ও মদের ঠেক নষ্ট করা ও ধরপাকড় চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “গত পঞ্চায়েত ভোটে পুলিশকে নাকানি চোবানি খেতে হয়েছিল। তাই পুলিশ এ বার কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।”

এ দিকে, এসপি’র তরফে সব থানার আইসি এবং ওসিদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি রুট মার্চ, এরিয়া ডোমিনেশন ও নাকাবন্দি, চেকিং-এর ছবি তুলে ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ-এর মাধ্যমে পাঠাতে হবে। এসপি অলোক রাজোরিয়া বলেন, “শুধু নাশকতার জন্য নয়, নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় ও পরে বেশ কিছু দুষ্কৃতী বা সমাজবিরোধী আছে, যারা বিভিন্ন দলের নাম করে নানা ভাবে গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করে। তা রোধ করা ও নির্বিঘ্নে নির্বাচন প্রক্রিয়া পরিচালনা করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

সহ প্রতিবেদন: দয়াল সেনগুপ্ত।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement