চলছে প্রশিক্ষণ।—নিজস্ব চিত্র।
পরনে জংলা পোশাক। কাঁধে এ কে ৪৭। গটগট করে হেঁটে যাচ্ছেন এক ঝাঁক তরুণী। তাঁদের ভারী বুটের আওয়াজে গমগম করছে এলাকা।
বাঁকুড়া শহর ও জঙ্গলমহলের ব্লকগুলিতে এমনই দৃশ্য চোখে পড়তেই পারে। এমনকী, বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুনমুন সেনের হয়ে ভোট-প্রচারে তাঁর দুই মেয়ে রিয়া-রাইমা জেলায় এলে, তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই প্রমীলা বাহিনীকেই দেখা যেতে পারে। শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁরা ছিলেন মুনমুনের ইঁদপুরের সভায়।
১০ জন জুনিয়র ও পাঁচ জন সিনিয়র মহিলা কনস্টেবল নিয়ে এই ‘মহিলা কম্যান্ডো বাহিনী’ গড়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার। ভোটে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং ভিভিআইপি-দের (বিশেষ করে মহিলা) নিরাপত্তায় এই বাহিনীকে কাজে লাগানো হবে। পুলিশ সুপার জানান, মহিলা কনস্টেবলদের বয়স ২৩ বছরের মধ্যে। জেলায় থাকা ১৬০ জন মহিলা কনস্টেবলের মধ্যে বয়স ও শারীরিক সক্ষমতার বিচারে ১৫ জনকেই বেছেছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। গত এক মাস ধরে তাঁদের এ কে ৪৭, এসএলআর চালানো, যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সামলানো, রোপ ক্লাইম্বিং, ওয়াল ক্লাইম্বিং-সহ নানা শারীরিক কসরতে সড়গড় করে তোলা হয়েছে।
বাছাই কনস্টেবলদের মধ্যে সিমলাপালের বাসিন্দা মীনাক্ষি সিংহ মহাপাত্র, জবা দাস, সারেঙ্গার তাপসী পাত্রের বক্তব্য, “মাওবাদীদের বাড়বাড়ন্ত যখন ছিল, ওদের মোকাবিলায় আধা সেনার জওয়ানদের দেখেছি। যখন কনস্টেবলের চাকরিতে ঢুকি, তখনও ভাবিনি প্রায় একই ধরনের প্রশিক্ষণ আমরাও পাব। ওই প্রশিক্ষণ পেয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ভাল লাগছে।”
জেলা পুলিশের কম্যান্ডো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী ও সিনিয়র পুলিশ অফিসারেরা বাঁকুড়া পুলিশ লাইন ও সারেঙ্গার জঙ্গলমহলে এই মহিলা পুলিশকর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, “আপাতত এই মহিলা কম্যান্ডোদের আমরা জেলায় ভোট-প্রচারে আসা ভিআইপি, ভিভিআইপি-দের নিরাপত্তায়, উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় নির্বাচনীসভায় নজরদারি করার কাজে লাগাব। এমনকী, এলাকায় টহলদারিও করবেন এই মহিলা কম্যান্ডো বাহিনী।” তবে ভবিষ্যতে এই কম্যান্ডোদের আরও কিছু কাজে নামানোর লক্ষ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন এসপি। জঙ্গলমহলে মোটরবাইকে টহলদারি, জঙ্গলে পুলিশের বিশেষ অপারেশনে যোগ দেওয়ার জন্যও মহিলা কম্যান্ডো বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
হঠাৎ মহিলা কম্যান্ডো বাহিনী গড়তে হল কেন? পুলিশ সুপার বলেন, “কিছু পরিস্থিতি এমন হয়, যেগুলো পুরুষদের চেয়ে ভাল ভাবে মোকাবিলা করতে পারেন মহিলারা। তা ছাড়া, মহিলা ভিআইপি-দের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব কাজে লাগবে ওই বাহিনী।”