পণের দাবিতে নির্যাতন মাত্রা ছাড়ানোয় বাপের বাড়ির দ্বারস্থ হয়েছিল মেয়েটি। গ্রামের কয়েক জনের উপস্থিতি তাঁর পরিজনদের নিয়ে সালিশি বসে শ্বশুরবাড়িতে। নিষ্ফলা ওই আলোচনার পরে রাতেই আত্মঘাতী হন বছর ছাব্বিশের ওই বধূ। ২০১৩ সালের ওই ঘটনায় দোষী স্বামীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের সাজা দিল আদালত।
মঙ্গলবার ওই সাজা শুনিয়েছেন বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। শুক্রবারই আদালত অভিযুক্ত আনন্দগোপাল ভাণ্ডারীকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল। সরকারি আইনজীবী মহম্মদ সামসুজ্জোহা বলেন, “বিচারক স্ত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়ার অপরাধে স্বামীকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে দোষী সাব্যস্তের তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং এক হাজার টাকা জরিমানা হয়েছে। বিচারকের নির্দেশে দোষী ব্যক্তির সমস্ত সাজাই এক যোগে চলবে।” উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে বধূর শাশুড়ি এবং দুই দেওর বেকসুর খালাস পান।
২০১২ সালের ৯ জুলাই ঝাড়খণ্ডের দুমকার বাঁধপাড়া গ্রামের গোকুলচন্দ্র ভাণ্ডারীর মেয়ে সুস্মিতার সঙ্গে বীরভূমের লাভপুর থানার হাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা আনন্দগোপাল ভাণ্ডারীর বিয়ে হয়েছিল। সুস্মিতার পরিবারের অভিযোগ, বর পক্ষের দাবি মেনে বিয়ের সময়ে নগদ টাকা, সোনার গয়না-সহ নানা সামগ্রী পণ হিসেবে দিতে হয়েছিল। কিন্তু, বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও টাকার দাবি করে সুস্মিতার উপরে চাপ বাড়াতে শুরু করে।
অভিযোগ উঠেছিল, দাবি মতো টাকা দিতে না পারায় ওই বধূর উপরে নিত্য দিন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বাড়তে শুরু করে। ২০১৩ সালের ১৮ জুন সুস্মিতা তাঁর বাবাকে ফোন করে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেন যে, অবিলম্বে টাকা না দিলে শ্বশুরবাড়ির লোক জন তাঁকে মেরে ফেলবে। পরের দিনই গোকুলবাবু তাঁর ছেলে মাধব এবং ভাইপো শক্তিচরণ ভাণ্ডারীকে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পাঠান। সমস্যা মেটাতে এলাকার কিছু মানুষকে নিয়ে দুই বাড়ি আলোচনায় বসলেও ফলপ্রসূ হয়নি। ওই রাতে দাদারা সুস্মিতার শ্বশুরবাড়িতেই থেকে যান। সরকারি আইনজীবী বলেন, “আনন্দগোপালবাবু দুই দাদাকে মাঝ রাতে ডেকে তুলে স্ত্রীর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানান। ওঁরা দেখেন, সুস্মিতার মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের হচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সুস্মিতার মৃত্যু হয়।” ময়না-তদন্তে জানা যায়, কীটনাশক জাতীয় কিছু খাওয়ার জেরে ওই বধূর মৃত্যু হয়েছে। পরের দিনই লাভপুর থানায় সুস্মিতার বাবা মেয়ের স্বামী, শাশুড়ি ও দুই দেওরের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন, খুন ও পণের দাবিতে খুন এবং পণ নিবারণ আইনের ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন। প্রত্যেকেই ধরা পড়লেও পুলিশ ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট জমা করতে না পারায় অভিযুক্তেরা জামিন পেয়ে যান।
২০১৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বোলপুর আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের এজলাসে বধূ নির্যাতন ও আত্মহত্যায় প্ররোচণা দেওয়া ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়। সরকারী আইনজীবী জানান, আদালতে অভিযুক্ত স্বামীর বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত ভাবে দোষ প্রমাণিত হয়েছে। গত শুক্রবার বধূর মা নিয়তি ভাণ্ডারীর মতামত শোনার পর মঙ্গলবার বিচারক সাজা ঘোষণা করেন।