বাহিনী নামতে শান্তি ফিরল শালতোড়ায়

ভোট দিতে না যাওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে বাড়িতে লেঠেল বাহিনী পাঠিয়ে, পাথর ছুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গ্রামবাসীদের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভোট আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল শালতোড়ার বাগজাদা গ্রামে। সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে শান্তিতেই ভোট দিলেন বাগজাদার আম ভোটাররা।

Advertisement

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও দেবব্রত দাস

শালতোড়া ও পাত্রসায়র শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৪ ০০:২২
Share:

সারেঙ্গার কুলডিহায় কড়া নিরাপত্তায় চলছে ভোট। ছবি: উমাকান্ত ধর।

ভোট দিতে না যাওয়ার ফতোয়া দেওয়া হয়েছিল। বাড়িতে বাড়িতে লেঠেল বাহিনী পাঠিয়ে, পাথর ছুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বিজেপি কর্মীরা। আতঙ্ক ছড়িয়েছিল গ্রামবাসীদের মধ্যেও। এই পরিস্থিতিতে শান্তিপূর্ণ ভোট আদৌ হবে কি না, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছিল শালতোড়ার বাগজাদা গ্রামে।

Advertisement

সব সংশয়ের অবসান ঘটিয়ে শান্তিতেই ভোট দিলেন বাগজাদার আম ভোটাররা। সকাল থেকেই স্থানীয় আনন্দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথে লাইন দিয়ে নির্বিঘ্নে ভোট দিলেন ওই গ্রামের বিজেপি কর্মী-সমর্থক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যেরাও। সৌজন্যে, জেলা প্রশাসনের কড়া বন্দোবস্ত। ওই গ্রামে তৃণমূল লাগাতার শাসানি দিচ্ছে, বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকারের কাছে এই অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার রাতে শালতোড়া থানার ওসি এবং যুগ্ম-বিডিও’কে ওই গ্রামে পাঠিয়েছিলেন বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী। গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন সুভাষবাবুও।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামে কেন্দ্রীয় বাহিনী নামানোর আশ্বাসও দিয়েছিলেন জেলাশাসক। শেষে কাজ হল সেই ওষুধেই। বুধবার, ভোটের দিন সকাল থেকে জিপে চড়ে সারা দিন দফায় দফায় বন্দুক হাতে গ্রামে টহল দিলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। আর তাতেই সাহস পেয়ে বাগজাদার বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা সাহসে ভর করে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের দিকে পা বাড়ালেন।

Advertisement

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের পর বাগজাদা ও সংলগ্ন কয়েকটি গ্রামের তৃণমূল কর্মীদের একটা অংশ বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় এলাকায় শক্ত মাটি পায় বিজেপি। লোকসভা ভোটের প্রচারে এই এলাকায় শাসকদল তৃণমূলকে সমানে সমানে টক্কর দিতে থাকে বিজেপি। সুভাষবাবুর অভিযোগ, ভোটের মাসখানেক আগে থেকেই বিজেপি ছেড়ে ওই নেতাদের ফের তৃণমূলে ফেরাতে চলছিল শাসানি। তাতে কাজ না হওয়ায় সোমবার রাতে গ্রামের আটচালায় সভা করে এলাকার তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্যে বিজেপি কর্মীদের উদ্দেশে ভোট না দিতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সোমবার রাতেই বিজেপি কর্মী নন্দলাল মণ্ডল, লালচাঁদ মণ্ডলের মতো বেশ কিছু সক্রিয় বিজেপি কর্মীর বাড়িতে লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয় একদল তৃণমূল কর্মী। প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান বিজেপি কর্মীরা। ওই রাতেই পুলিশের সঙ্গে ফের গ্রামে ঢুকে বুধবার বুথে না যাওয়ার হুমকি দেয় তৃণমূলের লোকজন। মঙ্গলবার সকালেও শাসানি-পর্ব চলেছে।

ঘটনার কথা জানতে পেরে জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বিজেপি প্রার্থী। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্যবস্থা নেয় জেলা প্রশাসন। বাগজাদার বিজেপি কর্মী সুবোধ মণ্ডল, বাগান মণ্ডলরা বলেন, “পুলিশের সঙ্গে মিলে যেভাবে আমাদের বাড়িতে ঢুকে তৃণমূলীরা হামলা চালিয়েছিল আর শাসানি দিয়েছিল, তাতে মনে হয়েছিল ভোটই হবে না। কিন্তু, কেন্দ্রীয় বাহিনী নামবে বলে রাতেই খবর পেয়েছিলাম। আর সকালে সত্যিই বাহিনীকে দেখার পর গ্রামের মানুষের আতঙ্ক কাটে। আমরাও নির্ভয়ে ভোট দিতে পেরেছি।” জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে বুঝেই কেন্দ্রীয় বাহিনী নামিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত শান্তিতেই ভোট হয়েছে।”

শালতোড়ায় নির্বিঘ্নে কাটলেও রাজনৈতিক ভাবে ‘সন্ত্রাসদীর্ণ’ বাঁকুড়ার পাত্রসায়র ও ইন্দাস ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় এ দিন শাসক দল গায়ের জোরে এক তরফা ভোট করিয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। গত পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকে ওই দুই ব্লকে শাসকদলের একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রয়েছে। সেই একচ্ছত্রের ছবি দেখা গেল এ দিনও। পাত্রসায়র ব্লকের ১৫৮টি বুথের মধ্যে অধিকাংশ বুথেই এজেন্ট দিতে পারেনি সিপিএম।

এরই মধ্যে ইন্দাসের পাহাড়পুরে সিপিএমের এক লোকাল কমিটির সদস্যকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের ইন্দাস জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম দাসের অভিযোগ, পাহাড়পুরের বুথে দলের পোলিং এজেন্ট ছিলেন করিশুন্ডা লোকাল কমিটির সদস্য নূর আলি।

এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ বুথ থেকে তিনি বেরোতেই তৃণমূলের লোকেরা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেধড়ক মারধর করে। বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী সুস্মিতা বাউরির অভিযোগ, “কয়েক দিন আগে থেকেই পাত্রসায়র ও ইন্দাসে আমাদের কর্মী-সমর্থকদের ভয় দেখানো হচ্ছিল। তারই জেরে পাত্রসায়রের অধিকাংশ বুথে আমরা এজেন্ট দিতে পারিনি। ইন্দাসে শাসানি সত্ত্বেও আমরা এজেন্ট দিয়েছিলাম। কিন্তু, তৃণমূলের ক্রমাগত হুমকিতে বহু এজেন্ট ফর্ম ফিলাপ করেও বুথে বসতে পারেননি। আবার অনেককে বুথ থেকে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য করেছে ওরা।”

ইন্দাস ব্লক তৃণমূলের নেতা রবিউল হোসেন অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমাদের দলের কেউ সিপিএম নেতাকে মারধর করেনি, হুমকিও দেয়নি। আর সিপিএমের হয়ে কেউ এ বার এজেন্ট হতে চাইছে না।”

দুই ব্লকের সাধারণ ভোটারদের কিন্তু বক্তব্য, এক সময় সিপিএম যে কায়দায় ভোট করত, বর্তমান শাসকদল সেই পথেই ভোট করাচ্ছে। বদলেছে শুধু পতাকার রং!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement