মোটা পাঁচিল দিয়ে গোটা আশ্রম চত্বর ঘেরার টাকা যদি মেলে, তা হলে বন্ধ হাসপাতাল চালু করার টাকার সংকুলান হয় না কেন, প্রশ্ন তুললেন অমর্ত্য সেন। শনিবার বিশ্বভারতীতে তিনি নবপর্যায়ে দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে হাসপাতালটি ভগ্ন অবস্থায় পড়েছিল। সংস্কারের পর এ দিন তার উদ্বোধন করে অমর্ত্যবাবু বলেন, বিশ্বভারতীর কাছে কোন বিষয়গুলি অগ্রাধিকার পাবে, তা নিয়ে চিন্তার প্রয়োজন। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তও বলেন, বিশ্বভারতীর পাঁচিল আশেপাশের মানুষের থেকে একটা মানসিক বাধা তৈরি করছে।
প্রাক্তন উপাচার্য সুজিত বসুর কার্যকালে পাঁচিল দিয়ে আশ্রম ঘেরা শুরু হয়। বিশ্বভারতীর জমি দখল হওয়া রুখতেই এই সিদ্ধান্ত, তখন জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এমনকী অমর্ত্যবাবু নিজেও এর আগে এই সিদ্ধান্তকে রবীন্দ্র-আদর্শের পরিপন্থী বলেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, “পাঁচিলের জন্য টাকা থাকবে, হাসপাতালের জন্য নয়, এটা খুবই আশ্চর্য। শান্তিনিকেতনে টাকার অভাব আছে, এ রকম প্রায়ই বলা হয়। কথাটা অসত্য নয়। কিন্তু আমাদের ভাবতে হবে, কী খাতে সীমিত অর্থ ব্যবহার করা উচিত।” তাঁর বক্তব্য, বিপুল অর্থ ব্যয়ে মোটা পাঁচিল দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করাটাই বড় প্রয়োজন, নাকি রোগমুক্তির জন্য চিকিত্সালয়গুলো চালু রাখার ব্যবস্থা করার মূল্য বেশি?
এ দিন রসিকতার সুরে অমর্ত্যবাবু বলেন, “এ পথে আমিও যাতায়াত করি। মোটা মোটা পাঁচিল টপকাতে হয়। অল্প বয়সে পাঁচিল টপকানোর যতটা ক্ষমতা ছিল, এখন তা কমে গিয়েছে।” সম্প্রতি অমর্ত্যবাবু তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘প্রতীচী’-র বার্ষিক সম্মেলনেও বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমিয়ে সরকারের আয় বাড়ানোর চেষ্টা করলে দেশের পক্ষে তার ফল ভাল হয় না। উদাহরণ দিয়ে গত রবিবার তিনি বলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা সামাজিক নিরাপত্তায় ব্যয় সংকোচ না করায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে। কিন্তু এই সব খাতে ব্যয় কমানোয় ইউরোপে বৃদ্ধি থমকে গিয়েছে। অমর্ত্যবাবুর কথার সূত্র ধরে সুশান্তবাবু বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শুধু ব্ল্যাকবোর্ডে পড়ানো নয়। শিক্ষার সম্প্রসারণের সঙ্গে আাশেপাশে যারা অচেনা বাসিন্দা, তাদের সঙ্গেও একটা যোগাযোগ স্থাপন করা দরকার।” উঁচু পাঁচিল সেখানে বাধা তৈরি করছে, বলেন তিনি।