ফের অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনকে ঘিরে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল। এ বারের ঘটনাস্থল অজয় নদ। বুধবার ইলামবাজার থানা এলাকার গঙ্গারাম ঘাটের ওই ঘটনায় অবশ্য ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক রংও লেগে গিয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, এলাকায় বিজেপির সমর্থন বাড়ায় তৃণমূলের দুষ্কৃতীরাই ওই বালিঘাট দখল করতে এসে বোমাবাজি করেছে। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ, ওই বালিঘাটকে কেন্দ্র করে সমস্যা মেটাতে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়ে ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দ্বারস্থ হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি রুখতে বৃহস্পতিবারই পুলিশ ওই এলাকায় কড়া নজরদারি শুরু করেছে।
ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে, এসডিপিও (বোলপুর) সূর্যপ্রতাম যাদব, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক। দু’পক্ষকেই কাগজপত্র নিয়ে বিএলআরও-র সঙ্গে দেখা করতে বলেছি।” ইলামবাজারের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শিবপদ দাস বলেন, “গঙ্গাপুর ঘাটে সরকারি নিয়ম নীতি মেনে বালি তোলা হোক, বাসিন্দারা এমন একটি লিখিত আর্জি জানিয়েছিলেন। ওই ঘাটে অবৈধ ভাবে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। গোটা ঘটনায় পদক্ষেপ করা হবে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘুড়িসা পঞ্চায়েতের গঙ্গাপুরে ঘাটে বালি তোলার সরকারি অনুমতি পেয়েছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা দশরথ রায় ভুঁইয়া। যিনি বালিঘাটের লিজ পেয়েছেন, তাঁকে প্রতি ১০০ কিউবিক ফুট বালি তোলার জন্য ৩১৫ টাকা রয়ালটি এবং সেই অনুপাতে সেস রাজ্য সরকারকে জমা দিতে হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, দশরথবাবুর থেকে লাগোয়া বর্ধমান জেলার কৈলাশপুরের বাসিন্দা শেখ ফিরোজ ওই বালিঘাটটি লিজে নিয়েছিলেন। অভিযোগ, সরকারি অনুমোদনের মেয়াদ ফুরিয়ে গেলেও শেখ ফিরোজ এবং তাঁর দলবল বেআইনি ভাবে ওই ঘাট থেকে দেদার বালি তুলছিলেন। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের সূত্রে খবর, বালি তোলার জন্য দশরথবাবুর প্রাপ্ত সরকারি বৈধতার মেয়াদ গত ১৫ মেই শেষ হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, স্থানীয় বালির সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের একাংশ অবৈধ বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে সমস্যা শুরু হয়। শেখ ফিরোজ তাঁদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দার দাবি, “বুধবার দুপুরে শেখ ফিরোজের কয়েকটি গাড়ি অবৈধ ভাবে বালি তুলছিল। তখন কয়েক জন স্থানীয় তার প্রতিবাদে করেন।” তখন ফিরে গেলেও পরে শেখ ফিরোজের দলবল ঘাটের দখল নিতে আসে। তখনই দু’পক্ষের মধ্যে ঝামেলা বাধে। খবর পেয়ে ইলামবাজার থানার পুলিশ এবং ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক শিবপদ দাস ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তখন পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এ দিকে, এলাকায় বালিতোলার কাজে যুক্ত স্থানীয় শ্রমিকদের একাংশের দাবি, সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটকে কেন্দ্র করে ঘুড়িসা পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির সংগঠন বেড়েছে। শ্রমিকদের একাংশও বিজেপিতে ভিড়েছে। তাতে ক্ষুব্ধ হয়েও মেয়াদ ফুরনোর পরেও তৃণমূল এলাকার নিয়ন্ত্রণ রাখতে ওই বালিঘাটটি দখল করতে চায়ছে বলে তাঁদের দাবি। বিজেপির বীরভূম জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক চিত্তরঞ্জন সিংহ বলেন, “স্থানীয় শ্রমিকদের পেটে লাথি মেরে তৃণমূল নিজেদের স্বার্থে শেখ ফিরোজের পক্ষ নিয়েছে। আসলে ওই পঞ্চায়েতে বেশ কয়েকটা আসনে বিজেপি এগিয়ে আছে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখতেই তারা ওই ঘাটে বালি তোলার অধিকারি স্থানীয় হাত থেকে ছিনিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করেছে।” স্থানীয় মানুষই এ ভাবে সরকারি কর ফাঁকি দেওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। বিজেপির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেই দাবি করেছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের ইলামবাজার ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম বলেন, “ওই বালিঘাটকে ঘিরে তৈরি হওয়ার সমস্যার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। আসলে বিজেপি এখন সব কিছুতেই তৃণমূল-জুজু দেখতে পাচ্ছে। তৃণমূল দল কোনও রকমের বেআইনি, অবৈধ কর্মকাণ্ড রদাস্ত করে না।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, জেলায় নদীগুলিতে অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলনে লাগাম টানা যাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাবে, আবার একটা বড় অংশের ক্ষেত্রেই পুলিশ-প্রশাসনের একাংশের কর্মীর মদতে বালি চুরির এই ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীগুলিও। অজয় নদের ঘটনার কথা জানানো হলে জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক নীলকুমার বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”