বোলপুরে বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক খোলার দাবিতে বোলপুরে আন্দোলন অব্যাহত রাখল আমানতকারী এবং ওই ব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীলরা। বুধবার সকালে বোলপুর চৌরাস্তায় ঘণ্টা দু’য়েক অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচীর পর, মহকুমা শাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেয় পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চ। মহকুমা শাসক মলয় হালদার বলেন, “আবেদনকারীদের দাবি খতিয়ে দেখে, প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি।”
বীরভূম জেলা কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্কের মোট আমানত প্রায় ৩৫৫ কোটি টাকা। ২ লক্ষ ৬৫ হাজারের কিছু বেশি আমানতকারি রয়েছেন এই ব্যাঙ্কের আওতায়। ব্যাঙ্ক প্রায় দুশো কোটি টাকা বকেয়া ঋণ বাবদ দিয়েছে। এছাড়া আনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৯০ কোটিরও বেশি টাকা। জেলায় রয়েছে ৩১৯টি প্রাইমারী এগ্রিকালচারাল কোপারেটিভ সোসাইটি সংক্ষিপ্তে প্যাক রয়েছে। যার সদস্য সংখ্যা দু’লক্ষ কুড়ি হাজারের বেশি। বিপদে এই বিপুল সংখ্যার মানুষ।
তেমনই একজন গৌরাঙ্গ মণ্ডল। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিএড পাঠক্রমে ভর্তি হতে পারেননি রতনপল্লির এই বাসিন্দা। তিনি এ দিন বিক্ষোভ মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “লেনদেন বন্ধের কারণেই নিজের গচ্ছিত টাকা না পাওয়ায় বিএডে ভর্তি হতে পারিনি।” প্রয়োজনের সময়ে নিজের আমানত না পাওয়ার কারণে ছেলে মেয়েদের বিয়ের জন্য মহাজনদের কাছে হাত পাততে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিক্ষোভকারীদের অনেকে।
ব্যাঙ্কের আওতায় ৪ হাজার স্বনির্ভর গোষ্ঠীর প্রায় পাঁচ লক্ষ্য সদস্য এই ব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল। বিপদে পড়েছেন তাঁরাও। একশো দিন কাজের প্রকল্পের প্রায় ৭০ হাজারের মতো আকাউন্ট রয়েছে এই ব্যাঙ্কের। এই সমস্ত গ্রাহকই এখন সমস্যায় পড়েছেন। যে সমস্ত ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়েছে, তাদের মধ্যে শ্রীনিকেতন শাখায় রয়েছে দেশের সমবায় আন্দোলনের প্রবক্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আকাউন্টও। ঐতিহ্যবাহী ওই ব্যাঙ্কের লেনদেনও ১৫মে থেকে বন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গ সমবায় বাঁচাও মঞ্চের পক্ষে আহ্বায়ক সাধন ঘোষ, আমানতকারি বিজয় সরকার, অরুণ পাল, লাভপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা কৃষক নেতা মানিক মণ্ডল বলেন, “ব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সার্বিক সমস্যার সমাধানে বুধবার অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন হয়েছে। গোটা বিষয়ের কথা জানিয়ে সমাধান চেয়ে বোলপুরের মহকুমা শাসককে স্মারকলিপি দিয়েছি।”
ব্যাঙ্ক এমপ্লইজ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার পক্ষে প্রদীপ ভট্টাচার্য, সমর রায়রা জানান, সমবায় ব্যাঙ্কের লেনদেন বন্ধ হওয়ায় অসুবিধায় পড়ছেন আমানতকারিরা। ব্যাঙ্কের ওপর নির্ভরশীল সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষেরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন নিত্য। অবিলম্বে ওই ব্যাঙ্ক চালু করে লেনদেন শুরু করা দরকার। এবং রাজ্য সরকারকে ভূমিকা নিতে হবে।