দিনের আলোয় প্রকাশ্যে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়েছিল এক যুবককে। ছ’ বছর আগে বোলপুর শহরের ওই ঘটনায় নিহতের প্রতিবেশী এক দম্পতি এবং তাঁদের ছেলেকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আদালত।
শুক্রবার বোলপুরের অতিরক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী দোষী সাব্যস্ত ওই তিন জনকে এই সাজা শুনিয়েছেন। সরকারি আইনজীবী শ্যামসুন্দর কোনার বলেন, “পূর্ব আক্রোশের জেরে ওই যুবককে খুন করা হয়েছিল। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবারই বিচারক অভিযুক্ত বাবা, মা এবং ছেলেকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে অন্য তিন অভিযুক্তকে আদালত বেকসুর খালাস করেছে।”
সরকারি আইনজীবী জানিয়েছেন, ২০০৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টা নাগাদ বোলপুরের সুরশ্রী পল্লীর বাসিন্দা শেখ আসিক (বাবুনিয়া) বাড়ি থেকে বেরিয়ে লালপুলের দিকে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে প্রতিবেশী শেখ আলম, তাঁর স্ত্রী আফরোজা বিবি এবং ছেলে শেখ ইয়াসিন বাবুনিয়াকে নিজেদের ঘরে ডেকে নিয়ে যান। তিন জন মিলে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেদম মারধর করেন। বাবুনিয়ার চিত্কার শুনে ঘটনাস্থলে আশপাশের বাসিন্দারা এবং পরিবারের লোক জনও ছুটে আসেন। শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “সবার বাধা উপেক্ষা করেই আফরোজা বিবির দেওয়া দু’টি কুড়ুল দিয়ে শেখ আলম এবং শেখ ইয়াসিন বাবুনিয়াকে কোপাতে থাকে। আরও লোক জন জড়ো হতেই রক্তাক্ত বাবুনিয়াকে ফেলে তিন জনেই পালিয়ে যায়।” সঙ্কটজনক অবস্থায় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা ওই যুবককে মৃত বলে জানান।
নিহতের বাবা শেখ আবুল ঘটনার দিনই বোলপুর থানায় ওই দম্পতি, তাঁদের ছেলে-সহ মোট ছ’জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। রাতেই অভিযুক্ত দম্পতি ও ছেলেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে বাকি তিন জন ধরা পড়ে। সরকারি আইনজীবী জানান, গ্রেফতারের ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট দিতে না পারায় ছ’জনই জামিন পেয়ে যান। শ্যামসুন্দরবাবু বলেন, “ওই ঘটনায় নিহতের পরিবারের কয়েক জন সদস্য, ময়না-তদন্তকারী চিকিত্সক, তদন্তকারী পুলিশ অফিসার নিয়ে মোট ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ নম্বর ধারায় ওই প্রতিবেশী যুবককে খুনে অভিযুক্ত বাবা, মা ও ছেলের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত ভাবে অপরাধ প্রমাণ হয়েছে। উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ না মেলায় অন্য তিন জন বেকসুর খালাস পেয়েছেন। এ দিন নিহতের বাবা বলেন, “ওই দম্পতির মেয়ে অন্য এক জনের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিল। ওঁদের পালাতে সাহায্য করেছে, এই সন্দেহে ওরা আমার ছেলেটাকে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। ওদের ফাঁসির সাজা হলে আরও খুশি হতাম।” অভিযুক্তদের আইনজীবী মহম্মদ সাসুজ্জোহা অবশ্য জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন।