বঞ্চনার ধারাবাহিকতা বজায় রইল। ইউপিএ’র পরে এনডিএ আমলেও রেল বাজেটে প্রত্যাশা পূর্ণ হল না রাঢ়বঙ্গের দুই জেলা পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ার। তবে বিজেপির দাবি, ‘নতুন ট্রেন ঘোষণা করে হাততালি পাওয়ার পরিবর্তে রেলের সার্বিক উন্নয়নে জোর দেওয়া হবে।’ তারই প্রতিফলন ঘটেছে রেল বাজেটে।
তবে বিজেপি নেতারা মুখে বাজেটের স্বপক্ষে যে যুক্তি দিন না কেন, আদ্রা ও আনাড়ার রেলের দু’টি বড় প্রকল্পের বিষয়ে বাজেটে রেলমন্ত্রী প্রকাশ্যে কিছু ঘোষণা না করায় কিছুটা হলেও আতান্তরে পড়েছে তাঁরা। কারণ, পুরুলিয়ার এই দুই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হোক চাইছে জেলার দুই রেল শহরের বাসিন্দারা। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়েই আদ্রাতে রেলের সঙ্গে এনটিপিসি’র যৌথ উদ্যোগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার বিষয়টি কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে সেটি রূপায়ণের দাবি উঠেছিল জেলা বিজেপির অন্দরেই। শিল্পবিহীন পাড়া ব্লকের আনাড়াতে রেলের কামরার মধ্যবর্তী থমকে থাকা পুনর্বাসন কারখানার কাজ শুরু করার বিষয়টি নিয়ে আশাবাদী ছিলেন দলের কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু বাজেট ঘোষণার সময়ে দু’টি প্রকল্প নিয়েই কিছু বলেননি রেলমন্ত্রী। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন আদ্রা ও আনাড়ায় দু’টি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আনাড়ার প্রকল্পে জমি ভরাট-সহ অন্যান্য কাজ কিছুটা এগোলেও আদ্রায় বিদ্যুতকেন্দ্র গঠনে কিছুই কাজ হয়নি। রেলের যে জমিতে প্রকল্প গড়ার কথা ছিল, সেই জমিতে সামাজিক বনসৃজন প্রকল্পে তৈরি হওয়া জঙ্গলের গাছ কেটে পরিষ্কার করে দিয়েছে কাঠ মাফিয়ারা। ফলে দু’টি প্রকল্পের ক্ষেত্রে এলাকাবাসীর আশা ছিল, বাজটে প্রকল্পগুলি রুপায়ণের দিশা নির্দেশ করবেন রেলমন্ত্রী।
একই ভাবে বাঁকুড়াবাসীর আশা ছিল ছাতনা-মুকুটমণিপুর রেলপথের অসমাপ্ত কাজ শেষ করার ঘোষণা বাজেটে থাকবে। বাঁকুড়ায় সভা করতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এলাকায় বিকাশের আশ্বাস দিয়েছিলেন। আশায় বুক বেঁধেছিল বাঁকুড়াবাসী। কিন্তু পুরুলিয়ার মতো আশাভঙ্গ হতে হয়েছে এই জেলাকে। স্বাভাবিকভাবেই রেল বাজেটে রাজ্যর দুই প্রান্তিক জেলা কিছু না পাওয়াতে বিজেপিকে বিঁধতে ছাড়েনি তৃণমূল। পুরুলিয়া জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর মন্তব্য, “হতাশাজনক বাজেট। দুই জেলার জন্য কিছুই দেয়নি।” পুরুলিয়ার দু’টি প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সময়েই ঘোষিত হয়েছিল মনে করিয়ে শান্তিরামাবাবু বলেন, “ইউপিএ’র সময়ে আমাদের নেত্রী পুরুলিয়ার আর্থ-সামাজিক বিকাশের জন্য দু’টি প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস রেলমন্ত্রক পাওয়ার পরে প্রকল্প দু’টি রূপায়ণের জন্য কিছুই করেনি। আর তারই পথ অনুসরণ করেছে বিজেপি।”
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “নতুন কোনও প্রকল্প ঘোষণা করার চাইতে জোর দিয়েছেন পুরনো প্রকল্পগুলি রূপায়ণে। আর আমরা রাজ্যের মাধ্যমে এই দু’টি পুরনো প্রকল্প রূপায়ণের দাবি আগেই জানিয়েছি। ফলে পুরুলিয়ার রেলপ্রকল্পগুলি রূপায়িত হবে এই বিষয়ে আমরা আশাবাদী।” আর বাঁকুড়ার নেতা তথা বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে অবাস্তব প্রকল্প ঘোষণা করার নীতি আমাদের নয়। পূর্বতন রেলমন্ত্রীরা সেই কাজটিই করেছিলেন বলে তাঁদের ঘোষিত প্রকল্পগুলি এখনও রূপায়িত হয়নি।” সুভাষবাবুর দাবি, রাজ্যর যে প্রকল্পগুলির বাস্তবতা রয়েছে এবং যেগুলি রূপায়ণ রেলের পক্ষে সম্ভব সেই প্রকল্পগুলির সম্পর্কে বিশদে তথ্য জোগাড় করে তাঁরা রেলমন্ত্রীর কাছে দরবার করবেন।
তবে বাজেটে পুরুলিয়ার জন্য একমাত্র শিকে ছিঁড়েছে ঝাড়গ্রাম-বান্দোয়ান রেলপথের সমীক্ষার ঘোষণায়। এলাকাবাসীর দাবি, আদ্রা থেকে বান্দোয়ান হয়ে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের। আগে লালুপ্রসাদ যাদব মন্ত্রী থাকাকালীন সমীক্ষার কথা ঘোষণা করলেও কাজ কিছুই হয়নি। ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আদ্রা-ঝাড়গ্রাম রেলপথ সংগ্রাম কমিটির নেতা আনন্দময় সেন বলেন, “আগে সমীক্ষার ঘোষণা করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এখন আমাদের দাবির কিছুটা পূর্ণ হওয়ায় আমরা খুশি।” কংগ্রেসের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি নেপাল মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, “আদ্রা ঝাড়গ্রাম রেলপথ নির্মাণের জন্য দীর্ঘ পথ পদযাত্রা করেছিল কংগ্রেস। সেই দাবি পূরণের জন্য রেলমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।”