বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর পুরশহরে দমকল কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের দাবি সত্ত্বেও দমকল কেন্দ্র নেই বাকি পুরশহর সোনামুখীতে। অথচ সোনামুখী শহরে বসতি যেমন বাড়ছে, তেমনি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও বাড়ছে। তাই দমকল কেন্দ্র না হওয়ায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ সোনামুখীর বাসিন্দারা। বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক পলাশ সেনগুপ্ত বলেন, “প্রশাসনিক স্তরে অনেক আগে সোনামুখীতে দমকল কেন্দ্র তৈরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বর্তমানে তা কী অবস্থায় রয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।”
সোনামুখী শহরের বাসিন্দা সুভাষ বিশ্বাস, গৌরহরি কারক বলেন, “সোনামুখী থেকে বাঁকুড়ার দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। অন্য দিকে বিষ্ণুপুরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। ফলে এই শহরের কোথাও বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে বাঁকুড়া কিংবা বিষ্ণুপুর থেকে দমকলের গাড়ি আসার আগেই সব শেষ।” তাঁরা জানান, এই দূরত্বের কারণেই বহুদিন ধরে সোনামুখীতে একটি দমকল কেন্দ্র চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রশাসনের তরফে কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি।
এই দাবিতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছেন সোনামুখীর ব্যবসায়ী মহল। তাঁদের বক্তব্য, শহরের জনবহুল এলাকায় বেশ কয়েকটি বাজার রয়েছে। কিন্তু সেখানে অগ্নিনির্বাপণের কোনও ব্যবস্থা নেই। গত কয়েক বছর আগে এখানকার একটি সব্জি বাজার আগুনে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়েছিল। সে বার বাঁকুড়া থেকে দমকলের ইঞ্জিন আসার আগেই আগুন পুরো বাজারে ছড়িয়ে যাওয়ায় আর কিছুই করা সম্ভব হয়নি। একই ভাবে সোনামুখী চৌরাস্তার বাজারে একটি মিষ্টি দোকানে আগুন লেগে পুড়ে যায় পাশের আরও কয়েকটি দোকান। এ ক্ষেত্রেও দমকল পৌঁছতে দেরি হয়েছিল বলে অভিযোগ। ব্যবসায়ী মহল ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তাঁরা সোনামুখীর পুরকর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি বারবার জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।”
বিষ্ণুপুর দমকল কেন্দ্রের ওসি শ্রীকান্ত বেজ বলেন, “শুধু সোনামুখী থেকেই বছরে অন্তত ২০টি অগ্নিকাণ্ডের খবর আসে। কিন্তু দূরত্বের কারণে সেখানে দমকল কর্মীরা যাওয়ার আগেই ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়ে যায়। কর্মীরা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। আসা-যাওয়ার প্রায় ৭০ কিলোমিটার পথে গাড়ির তেল পোড়ানো ব্যর্থ হয়।” তাঁর মতে, সোনামুখীতে দমকল কেন্দ্র চালু হলে ইন্দাস, পাত্রসায়র থানার বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন।
সোনামুখীর পুরপ্রধান কুশল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও বাসিন্দাদের দাবির সমর্থন মিলেছে। পুরপ্রধান বলেন, “এই শহরের বিভিন্ন বাড়িতে রেশমজাত সিল্কের কাপড় বোনা হয়। বহু তাঁতঘরই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে। ওই এলাকায় আগুন লাগলে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে। কিন্তু বাঁকুড়া বা বিষ্ণুপুর দমকল কেন্দ্র থেকে গাড়ি আসার আগেই সব ছাই হয়ে যাবে। এমন দৃষ্টান্ত অনেক রয়েছে। তাই সোনামুখী শহরে একটি দমকল কেন্দ্র স্থাপন অত্যন্ত জরুরি।” পুরপ্রধানের দাবি, “শহরবাসীর দাবিকে আমরা অবহেলা করিনি। দমকল কেন্দ্র গড়ার জন্য জমির ব্যবস্থা করে দেব বলে দমকল বিভাগকে আমরা প্রস্তাবও দিয়েছিলাম। কিন্তু তারপরেও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বর্তমান রাজ্য সরকারক।” বাসিন্দাদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করছেন সোনামুখীর তৃণমূল বিধায়ক দীপালি সাহাও। তিনি বলেন, “আমি এলাকার মানুষের দাবির কথা দমকল মন্ত্রী জাভেদ খানকে জানিয়েছি। বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলে তিনি আশ্বাসও দিয়েছেন।”
সোনামুখীর পুরবাসীর ক্ষোভের আগুন নেভাতে কবে দমকল কেন্দ্র তৈরি হবে, সেটাই দেখার।
অ্যাম্বুল্যান্স প্রদান। অযোধ্যা পাহাড়ের রাঙা গ্রামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে রবিবার বিধায়ক তহবিল থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিলেন স্থানীয় বিধায়ক নেপাল মাহাতো। তিনি বলেন, “পাহাড়ের মানুষকে চিকিত্সা পরিষেবা দিতে আরও অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া হবে।”