বধূ নির্যাতন ও পুড়িয়ে মারার দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড হল স্বামীর। বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী অভিযুক্তকে বৃহস্পতিবার দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। শুক্রবার সাজা ঘোষণা হয়। যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সরকারি পক্ষের আইনজীবী সুপ্রকাশ হাটী জানান, বছর তিনেক আগে বোলপুর থানার মুলুক দক্ষিণ পাড়ার বাসিন্দা মানোয়ারার সঙ্গে লাভপুরের মান্দারি গ্রামের বাসিন্দা শেখ শাহাজাহানের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর থেকে নানা কারণে অকারণে মানোয়ারা বিবির ওপর অকথ্য অত্যাচার চালাত তার স্বামী-সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ২০১২ সালের ২৩ মে লাভপুর থানার মান্দারি গ্রামে টাকা ও সোনাদানার দাবিতে মানোয়ারা বিবির গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী শেখ শাহাজাহান। সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই বধূকে প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। ওই দিনই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এই ঘটনায় মানোয়ারা বিবির বাবা আনোয়ার শেখ ২৬ মে লাভপুর থানায় জামাই এবং তার চাচা শেখ আনোয়ার ও চাচি মেহেনিকা বিবির নামে পণের দাবিতে বধূ নির্যাতন করে পুড়িয়ে খুনের চেষ্টার লিখিত অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে পণের জন্য বধূ নির্যাতন ও খুনের চেষ্টার মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযোগ পাওয়ার পরই শেখ শাহাজাহানকে ওই দিনই গ্রেফতার করে পুলিশ। দিন কয়েক চিকিত্সাধীন থাকার পর ওই বছর পয়লা জুন বর্ধমান মেডিক্যালে মারা যান মানোয়ারা বিবি। হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে, চিকিত্সককে দেওয়া বয়ান সংগ্রহ করে পুলিশ। ওই বধূর মৃত্যুকালীন বয়ান সংগ্রহের পর অভিযুক্ত তিন জনের বিরুদ্ধে ওই ধারা-সহ যোগ হয় খুনের ধারা। বধূ নির্যাতন করে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতারের ৭০ দিনের মাথায় বোলপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পান তারা। চলতি বছর ২১ এপ্রিল তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুনের ধারায় চার্জ ফ্রেম করে আদালত। ওই বধূর মৃত্যুকালীন জবানবন্দী, ঘটনার তদন্তকারী অফিসার, চিকিত্সক নিয়ে মোট বারো জনের সাক্ষ্য নিয়েছে আদালত। বধূকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় বৃহস্পতিবার উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণের অভাবে দুই অভিযুক্ত শেখ আনোয়ার ও তার স্ত্রী মেহেনিকা বিবিকে বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেন বোলপুরের অতিরক্ত জেলা জজ সিদ্ধার্থ রায়চৌধুরী। পাশাপাশি এই ঘটনায় নিহত বধূর স্বামী শেখ শাহাজাহানকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। এ দিন সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।