তৈরি হচ্ছে খাঁড়া। ছবি: অনির্বাণ সেন।
রাত পোহালেই কালী পুজো। এখনও দুর্গাপুজা, মনসাপুজা, ধর্মরাজের পুজোতেও বলিদান প্রথা চালু আছে। কোথাও কোথাও পশুবলি থেকে উদ্ভিদ বলি দেওয়া হয়। প্রথার রদবদল হলেও, বলিদানের জন্য খাঁড়া অনির্বায। আর এই খাঁড়া নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত জেলার রামপুরহাট থানার খরুণ গ্রামে শিল্পীরা। কালক্রমে ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি আজ ক্রমশ অবলুপ্তির পথে ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়েছে। শ্যামাপুজোর আনন্দের দিনেও তাই মন খারাপ খরুণ গ্রামের শিল্পীদের।
গ্রামের শিবতলা লাগোয়া কামারশালা। সেখানে দেখা গেল কালী পুজোর জন্য বেশ কয়েকটি খাঁড়া পালিস করার জন্য রাখা আছে। শিল্পী তামাল কর্মকার বলেন, “অর্ডার ছাড়া খাঁড়া তৈরি করি না। প্রায় প্রতি মাসেই একটা দুটো করে হয়। এবছর দুর্গাপুজার সময় শুধুমাত্র কলকাতাতে পাঁচটি খাঁড়া বিক্রি করেছি। দিন দিন চাহিদা কমে আসছে।” শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তামাল কর্মকার, বিকাশ কর্মকাররাও জানালেন একই কথা। এই গ্রামে আগে ২৫ ঘর কর্মকার বাস করত। এখন ১৫ ঘর বাস করে। তাঁদের মধ্যে বাপ-ঠাকুরদার কাছে শেখা খাঁড়া তৈরি করে একমাত্র তিন ভাই এখনও টিকিয়ে রেখেছেন শিল্পটি।
জানা গেল, মাঝে মাঝে মুম্বই থেকেও অর্ডার পেয়ে থাকেন শিল্পীরা। একটি খাঁড়া তৈরি করতে ১৫ দিনের শ্রম লাগে। এক শিল্পী বলছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। জানা গেল, সাঁইথিয়া থেকে ৫ কেজি ইস্পাত ১৪০ টাকা দরে কিনে, তার সঙ্গে ৩০০ টাকা দরে ১ কেজি পিতল মেশানো হয়। একটি আড়াই ফুট উচ্চতার খাঁড়ার তৈরির জন্য এই কাঁচামাল লাগে বলে জানান ওই শিল্পী। শিল্পী দের অভিযোগ, শিল্প বাঁচাতে তাঁদের জ্বালানী হিসাবে কয়লা কিনতে হয়। খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য তাঁদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে পড়েছে।
একটি আড়াই ফুট উচ্চতার খাঁড়া বিক্রি করা হয় সাত হাজার টাকা দরে। শিল্পী বিকাশ কর্মকার বলেন, “বাপ ঠাকুরদার হাতে তৈরি খাঁড়া ১০০ বছর টিকে আছে। মাঝে মাঝে পালিশ করতে হয়। কিন্তু এখন তেমন দাম মেলে না। তাই এই শিল্প ধুঁকছে।”
খরূন গ্রামের বাসিন্দা শ্যামা সাধন চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপ ভট্টাচার্যরা বলেন, “এই শিল্পীরা চলে গেলে গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী শিল্পটা শেষ হয়ে যাবে। সরকার যদি এই শিল্পকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে তাহলে গ্রাম বাংলার এই প্রাচীন কুটিরশিল্পটি বেঁচে থাকবে।”