অস্বস্তিতে সিউড়ির তৃণমূল পুরবোর্ড

দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে পথে বিজেপিও

কংগ্রেস, সিপিএমের পরে আসরে এ বার বিজেপি। পুরভোটের মুখে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ফের সরগরম সিউড়ি! সোমবার জেলাশাসকের কার্যালয়ের কাছে মঞ্চ করে প্রতীকী অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হল বিজেপি যুব মোর্চাও। এমনকী, বেনজির ভাবে সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যে তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের পাশেই দাঁড়িয়েছেন!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০০:৩৯
Share:

কংগ্রেস, সিপিএমের পরে আসরে এ বার বিজেপি। পুরভোটের মুখে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে ফের সরগরম সিউড়ি!

Advertisement

সোমবার জেলাশাসকের কার্যালয়ের কাছে মঞ্চ করে প্রতীকী অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হল বিজেপি যুব মোর্চাও। এমনকী, বেনজির ভাবে সংগঠনের নেতারা প্রকাশ্যে তৃণমূল বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের পাশেই দাঁড়িয়েছেন! মোর্চার জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা বলেন, “স্বপনবাবুর দাবিকে আমরা সমর্থন করি। আমরা বিশ্বাস করি বর্তমান তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড শুধু জলপ্রকল্প বা বস্তি উন্নয়নের টাকা নিয়েই নয়, আরও বহু ক্ষেত্রেও দুর্নীতি করেছে। আমরা এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই।” আগামী দিনে পুরপ্রধানের গ্রেফতারির দাবি জানিয়ে বিজেপি যুব মোর্চা আরও জোরাল আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, দলেরই বিধায়ক আসন্ন পুরভোটের আগে তণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে যে ভাবে সরব হয়েছেন, তা বিরোধীদের হাতে বাড়তি অস্ত্র তুলে দিয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতির তদন্তের দাবিতে স্বপনবাবু বিধানসভার বাইরে সরব হয়েছিলেন। যে ঘটনা তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বকে প্রবল অস্বস্তিতেও ফেলেছিল। তার জেরে স্বপনবাবুকে দল সাসপেন্ডও করেছে। কিন্তু, তার পরেও চুপ থাকেননি সিউড়ির বিধায়ক। আর ঘটনার পরেই দুর্নীতির অভিযোগকে ঘিরে হইচই শুরু করেছে বিরোধী দলগুলিও। বস্তুত, স্বপনবাবু বিধানসভার বাইরে ধার্নায় বসার পরের দিনই জেলাশাসকের কার্যালয়ের কাছে মঞ্চ করে প্রতীকী অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছিল কংগ্রেস। পথে নামে সিপিএমও। সেই একই জায়াগায় এ দিন প্রতীকী অবস্থান বিক্ষোভ করল বিজেপি যুব মোর্চা।

Advertisement

তৃণমূল পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ঠিক কী অভিযোগ রয়েছে?

স্বপনবাবুর অভিযোগ, জলপ্রকল্প এবং বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অনুদানের প্রায় ১০ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা সিউড়ি পুরসভা থেকে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছে। দলের হাতে থাকা সিউড়ি পুরসভার এই দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখার আগে দলীয় স্তরে কেলেঙ্কারির কথা জানিয়েও বিশেষ লাভ হয়নি বলে বিধায়কের দাবি। সেই চিঠিতে স্বপনবাবু জানিয়েছিলেন, গরমিলের কথা আঁচ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্টেট আরবান ডেভলপমেন্ট এজেন্সির (সুডা) কাছে অন্তত পাঁচটি চিঠি তিনি লিখেছিলেন। কিন্তু, একটিরও জবাব পাননি। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে সিউড়ির তৃণমূল বিধায়ক এমনও দাবি করেছিলেন, পুরসভার দুর্নীতির চোটেই লোকসভা ভোটের ফলাফলে সিউড়ি শহরের ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৫টিতেই বিজেপি-র থেকে পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল। ওই চিঠি লেখার পরেও দলের তরফে এ নিয়ে কোনও হেলদোল না দেখে স্বপনবাবু দুর্নীতির তদন্ত চেয়ে বিধানসভার সামনেই ধর্নায় বসে পড়েন। একই দাবিতে তিনি দিন তিনেক আগে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গেও দেখা করেছেন।

ঘটনা হল, সিউড়ি শহরের সবচেয়ে বড় সমস্যা, পানীয় জলের সঙ্কট দূর করতে ২০০৭ সালে কেন্দ্রীয় ‘জহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ প্রকল্পে একটি জলপ্রকল্প গড়ে তোলার জন্য প্রায় ৯ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার বরাদ্দ অনুমোদিত হয়েছিল। তত্‌কালীন কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড ২০১০ সাল পর্যন্ত সেই বরাদ্দের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা পেয়েছিল। কিন্তু, তত দিনে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১৪ কোটি ৪৬ লক্ষ। পরে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতা দখল করার পরে ১২ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা পেয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, ইউটিলাজেশন সার্টিফিকেট দিয়েছে ৭ কোটি টাকার। আর দুর্নীতির অভিযোগের সূত্রপাত সেখান থেকেই। বিধায়ক এবং বর্তমান পুর কাউন্সিলারদের একাংশের বক্তব্য, যে অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা খরচ দেখানো হয়েছে, সেখানে আর কোনও টাকা পড়ে নেই। কাজও শেষ হয়নি।

তা হলে টাকা গেল কোথায়?

পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় অবশ্য প্রথম থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, কর্মীদের বেতন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পেনশন দিতে ওই খাত ভাঙতে হয়েছিল। একই দাবি ছিল, তৃণমূলের সিউড়ি শহর সভাপতি অভিজিত্‌ মজুমদারেরও। তাঁর বক্তব্য, এটা মোটেই দুর্নীতি নয়। উল্টে, দলেরই বিধায়কের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পুস্তিকা ছাপিয়ে পাল্টা প্রচারে নামার কথাও দিন কয়েক স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ঘোষণা করেছিলেন। যদিও সেই পুস্তিকা এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে, বিরোধী দলগুলি যে ভাবে পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানাচ্ছে, তার মোকাবিলা কী করে করা হবে সেটাই এখন শাসকদলের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাতে সন্দেহ নেই।

যদিও আসন্ন পুরভোটের আগে এ দিন নতুন করে বিজেপি-র এই ক্ষত খুঁচিয়ে তোলার চেষ্টাকে উজ্জ্বলবাবু ততটা আমল দিতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, “দুর্নীতি হয়েছে কী হয়নি, দল জানে। আর সেটা জানে বলেই জলপ্রকল্প শেষ করতে ইতিমধ্যেই পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম প্রয়োজনীয় টাকা বরাদ্দ করেছেন। এমইডি পুর ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরকে দিয়ে শীঘ্রই কাজ শেষ করাবে। তা হলে আর দুর্নীতির প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement