বছরে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে বড়জোড়া পঞ্চায়েত এলাকার একটি পুকুর সংস্কারের কাজে দুর্নীতি নিয়ে দু’ভাগ হল তৃণমূল শিবির। দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এককাট্টা হলেন বিরোধীরাও। ঘটনাটিকে ঘিরে বৃহস্পতিবার সরগরম হয়ে উঠল বড়জোড়ার রাজনীতি।
বড়জোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, বড়জোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের জমাদার গ্রামের আমড়ারডাঙা এলাকায় ‘বড়কি পুকুর’ সংস্কারের জন্য ১০০ দিনের প্রকল্পে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়। যার মধ্যে প্রায় ২ লক্ষ টাকা ইতিমধ্যেই তুলে নেওয়া হয়েছে। এ কথা পঞ্চায়েত থেকে জানাজানি হতেই ওই পুকুরের অংশীদার-সহ গ্রামবাসীদের একাংশ বিডিও-র কাছে প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, বাস্তবে পুকুর সংস্কারের কোনও কাজই হয়নি। অথচ সেই কাজের জন্যই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে! ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করেছেন গ্রামবাসী। অভিযোগ পাওয়ার পরেও প্রশাসনিক ভাবে বিষয়টির তদন্ত করা হয়নি বলেও ক্ষোভ গ্রামবাসীদের। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বড়জোড়ার বিডিও ইস্তেয়াক আহমেদ খান।
বর্তমানে বড়জোড়া পঞ্চায়েতের ২৫টি আসনের মধ্যে ৫টি সিপিএম এবং ২০টি তৃণমূলের দখলে। বৃহস্পতিবার ২০১৩-’১৪ আর্থিক বছরে ১০০ দিনের প্রকল্পের আয়-ব্যয়ের হিসাব ও অনুমোদন পেশ করতে একটি সাধারণ সভা ডাকেন পঞ্চায়েত প্রধান, তৃণমূলের অর্চিতা বিদ। পঞ্চায়েত সূত্রের খবর, সভা শুরুর আগেই সিপিএম এবং তৃণমূল সদস্যদের একাংশ বড়কি পুকুর সংস্কারের প্রকৃত তথ্য দেওয়ার দাবি তোলেন। এ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে বচসা বেধে যায় প্রধান-সহ পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্যদের আর এক অংশের। সভা বয়কট করে বেরিয়ে যান সিপিএম সদস্যেরা। তাঁদের পথ ধরেন তৃণমূলের আট সদস্যও। পঞ্চায়েতের বিরোধী নেতা, সিপিএমের গৌতম ধীবরের দাবি, “পুকুর কাটার নামে আসলে পুকুর চুরি হয়েছে। ওখানে কোনও কাজ না করেই টাকা তুলে খরচ দেখানো হয়েছে। মানুষের সামনে এর প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে হবে।”
একই সুরে তৃণমূলের ওই আট সদস্য বলেন, “সভা ডেকে তড়িঘড়ি পুকুর সংস্কারের কাজটিকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এখানে দুর্নীতি হয়েছে। তাই আমাদের কিছু সদস্যেরা এর বাইরেই থাকতে চেয়েছে। আমরা দলকে লিখিত ভাবে এই ঘটনার কথা জানাবো।”
পঞ্চায়েত প্রধান অর্চনাদেবী অবশ্য জানিয়েছেন, ওই পুকুরটি নিয়ে শরিকি বিবাদ থাকায় অর্ধেক পুকুরে সংস্কারকাজ করা গিয়েছে। বাকিতে করা যায়নি। তাই ২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। বাকি টাকা ফেরত গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, “আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিই না। সিপিএমের লোকজন ও একশ্রেণির সুবিধাবাদী রাজনীতিক আমাদের বিরুদ্ধে কুত্সা রটাচ্ছে। কিন্তু, মানুষ তৃণমূলকে বিশ্বাস করে।” প্রধানের আরও দাবি, “প্রতি মাসে রুটিন মাফিক সভা ডাকা হয়। সেই ভাবেই এ দিনের সভা ডাকা হয়েছিল। কোনও তৃণমূল সদস্যই সভা বয়কট করেনি। হাঙ্গামাও হয়নি।”
এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিকেলে বড়জোড়ায় একটি পথসভা করে সিপিএম। দলের বাঁকুড়া জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী বলেন, “কাজ না করিয়েও সুপারভাইজারের মাধ্যমে টাকা তুলে আত্মসাত্ করা হয়েছে। এই ঘটনার প্রকৃত তদন্ত না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাব।” ওই জায়গাতেই সন্ধ্যায় পাল্টা সভা করে ব্লক তৃণমূল সভাপতি জহর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সিপিএম অপপ্রচার করছে।”