অভিযুক্ত তৃণমূল সভাপতি সহদেব কোটাল।—ফাইল চিত্র।
অবাধ ভোটের স্বার্থে পদক্ষেপ করে হুমকির মুখে পড়েছেন প্রশাসনের অফিসারেরা। অভিযোগটি উঠেছে বাঁকুড়ার কোতুলপুরে।
ভোটারদের বুথে আসতে বাধা দিচ্ছেন কিছু তৃণমূল কর্মী-সমর্থক সোমবার, রাজ্যে পঞ্চম দফার ভোটের দিন সকাল থেকে কোতুলপুরের বিভিন্ন এলাকায় এই মর্মে অভিযোগ উঠতে থাকায় স্থানীয় গাঁতি ও সাহাবাদচক বুথের সামনে ৮-৯ জন তৃণমূল নেতাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা। তার জেরে ভোট মিটে যাওয়ার পরে ওঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। শাসানি এমন পর্যায়ে যে, বুধবার কোতুলপুরের বিডিও অভিনন্দা মুখোপাধ্যায় পুলিশে এফআইআর-ও করেছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর: স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল সভাপতি সহদেব কোটালের বিরুদ্ধে ভোটকর্মীদের হুমকি ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগ এনেছেন বিডিও। যদিও সহদেববাবু অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেছেন, “কাউকে হুমকি দিইনি। এ দিনও সবার সঙ্গে দেখা হল। আমার সামনে তো কেউ এ সব বললেন না!” উল্টে ওই তৃণমূল নেতার দাবি, তিনি বুথের ৫০০ মিটার দূরে থাকা সত্ত্বেও এক অফিসার তাঁকে সরে যেতে বলেন। “কোতুলপুরে ভোট শান্তিপূর্ণ হয়েছে।” মন্তব্য সহদেববাবুর।
কমিশন-সূত্রের খবর: কোতুলপুরের বিভিন্ন বুথে ভোটারদের যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে সোমবার পরপর এমন অভিযোগ আসায় দু’জন বিশেষ এগ্জিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সেক্টর অফিসার সেখানে যান। গিয়ে তাঁরা দেখেন, অভিযোগ সত্যি। তখন তাঁরা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সাহায্যে সমস্ত বাধা উঠিয়ে দেন, পুলিশের তাড়ায় পালান বাধাদানকারী তৃণমূল সমর্থকেরা। অভিযোগ, সহদেববাবু ঘোষপাড়া বুথের সামনে জমায়েত করে ভোটারদের আটকে দিচ্ছিলেন। বাহিনী তাঁকেও সরিয়ে দেয়। শেষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে কোপা, গাঁতি, সাহাবাদচক ও ঘোষপাড়া গ্রামের লোকজন বুথে গিয়ে ভোট দেন।
প্রশাসন সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, অফিসাররা স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের আটক করেছিলেন বা বুথের সামনে থেকে সরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই কোতুলপুর ব্লকে সহদেববাবুর অধীনে কাজ করেন। ব্লক প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ, অধীনস্থদের এই ‘সক্রিয়তা’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির পছন্দ হয়নি। ভোটগণনার পরে ‘দেখে নেওয়া হবে বলে ওই তিন অফিসারকে হুমকি দেওয়া হয়। বিডিও এমনই অভিযোগ করেছেন কোতুলপুর থানায়। “অফিসারদের শাসানি ও কাজে বাধার অভিযোগে সহদেববাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে।” এ দিন বলেন অভিনন্দা।
কমিশন-সূত্রের খবর: ভোটের বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়া ইস্তক রাজ্য নির্বাচন দফতরের কর্মীদের সঙ্গে সহদেববাবু বারবার বিবাদে জড়ান। কখনও নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর করার প্রশ্নে, কখনও সরকারি জায়গা থেকে শাসকদলের কাটআউট, ব্যানার বা পোস্টার খোলা নিয়ে ব্লক অফিসের অফিসারদের সঙ্গে তাঁর বাদানুবাদ হয়েছে। উপরন্তু বিষ্ণুপুর লোকসভার অন্তর্গত জয়পুর, পাত্রসায়র, সোনামুখী ও কোতুলপুর থেকেই বাইকবাহিনীর দাপট ও ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ সব চেয়ে বেশি এসেছিল। ওই তল্লাটে শাসক দলের দাপাদাপি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, বুথে চড়াও হয়ে ছাপ্পা ভোট মারার অভিযোগে সোনামুখীর বিধায়ক দীপালি সাহার বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে। যদিও দীপালিদেবী এখনও অধরা।
পুলিশের উপরমহল কী বলছে? বাঁকুড়ার জেলাশাসক বিজয় ভারতী ও পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার দু’জনেই বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” অভিনন্দার অভিযোগের পিছনে অবশ্য ‘দূরভিসন্ধি’ দেখছেন কোতুলপুরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি প্রবীর গড়াই। তাঁর মন্তব্য,“এর পিছনে বিডিও-র কুমতলব আছে। বিরোধীরা ওঁকে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। সমিতির সভাপতি কাউকে হুমকি দেননি।”