বধূর মৃত্যুর পরেই দুর্লভপুরে এই ডাম্পারে আগুন লাগিয়ে দেন উত্তেজিত জনতা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ছাইবাহী গাড়ির ধাক্কায় এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া দুর্লভপুর।
বৃহস্পতিবার দুপুরের ঘটনা। মৃতের নাম জবা লোহার (৫৫)। তাঁর মৃত্যুর পরেই উত্তেজিত জনতা মহিলাকে যে ডাম্পারটি ধাক্কা মেরেছিল, তাতে আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাঙচুর চালানো হয় আরও কয়েকটি ডাম্পার ও ট্রাকে। পুলিশ গেলে জনতার বিক্ষোভে তারা পিছু হটে। পরে বাঁকুড়া থেকে কমব্যার্ট ফোর্স নিয়ে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
ডিভিসি-র মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া লটিয়াবনির ছাই পুকুর থেকে রানিগঞ্জ ও আসানসোলে ডাম্পারে করে ছাই নিয়ে যাওয়া হয়। ছাই পরিবহণের পদ্ধতি নিয়ে এলাকায় কম অভিযোগ নেই। পরিবহনের সময়ে ডাম্পার থেকে রাস্তায় ছাই ছড়িয়ে পড়ছে এবং অতিরিক্ত পরিমাণে ছাই বহনে রাস্তা ভাঙছে বলে অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। এ দিন দুর্ঘটনায় সেই ছাইচাপা আগুনের বর্হিপ্রকাশ ঘটে বলে বাসিন্দাদের দাবি।
এ দিন দুপুর ১২টায় লটিয়াবনি থেকে ছাই নিয়ে ডাম্পারগুলি বড়জোড়ার দিকে যাচ্ছিল। সেই সময় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র লাগোয়া রেলগেটের কাছে জ্বালানি কাঠ নিয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে দুর্লভপুরে বাড়ি ফিরছিলেন জবাদেবী। বাসিন্দাদের দাবি, একটি ডাম্পার জবাদেবীকে পিষে দেয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনার পরেই ডাম্পার ছেড়ে চম্পট দেয় চালক ও খালাসি। খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা এলাকায় এসে মৃতদেহ ঘিরে রাস্তায় অবরোধ শুরু করেন। সেই সময়েই কিছু লোক ওই ডাম্পারে আগুন লাগায়। অবরোধে আটকে পড়া কয়েকটি ডাম্পার ও ট্রাকে ভাঙচুর চালান উন্মত্ত জনতা। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন আগুন নেভাতে এলে বাধা দেন বাসিন্দারা। ইঞ্জিনটি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে বাধ্য হন দমকলকর্মীরা।
গঙ্গাজলঘাটি থানা থেকে পুলিশ এলে তারাও বাসিন্দাদের বাধার মুখে পড়ে। বাসিন্দারা পুলিশকর্মীদের বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি অন্যরকম দেখে পুলিশ কর্মীরা কিছুটা দূরে সরে যান। আরও বাহিনী চেয়ে পাঠানো হয় বাঁকুড়া পুলিশ লাইন থেকে। ওই ঘটনার জেরে ঘণ্টা দুয়েক অবরোধ চলে। ফলে বাঁকুড়া থেকে মেজিয়া ও দুর্লভপুর থেকে বড়জোড়ার দিকে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পুলিশ গিয়ে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। তারপরে যান চলাচল শুরু হয়।
লটিয়াবনি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য তারাপদ খাঁ বলেন, “ছাইয়ের ডাম্পারের ধাক্কায় আগেও এই এলাকায় অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ওই ডাম্পারগুলি নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত পরিমাণে ছাই বয়ে নিয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বন্ধ হয়নি। জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ডিভিসি-কে এ ব্যাপারে বার বার আর্জি জানিয়েও কাজ হয়নি।”
ডিভিসি-র ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার অশোককুমার ভার্মা বলেন, “দুর্ঘটনার খবর শুনেছি। বিস্তারিত খোঁজ নেব।” জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “ডাম্পারগুলি যাতে নিয়ম মেনে ছাই বহন করে, সে ব্যাপারে আগও সতর্ক করা হয়েছে। এ দিনের দুর্ঘটনার পরে আবার সতর্ক করা হবে।”