বাঁ দিক থেকে, বাসুদেব আচারিয়া, নরহরি মাহাতো, সুস্মিতা বাউরি।
শরীর মাঝে মধ্যেই বাধ সেধেছে। বার বার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঘনিষ্ঠদের অনেকেই মনে করেছেন, আগামীবার তিনি বোধহয় নির্বাচনে আর দাঁড়াবেন না। কিন্তু সেই ১৯৮০ সাল থেকে টানা ন’বার বাঁকুড়া কেন্দ্র থেকে লোকসভা ভোটে জিতে আসা বাসুদেব আচারিয়ার উপরেই এ বারও ভরসা করেছে তাঁর দল সিপিএম তথা বামফ্রন্ট।
বাসুদেববাবুর বয়স এখন ৭২ বছর। আদ্রার কাটারঙ্গুনী এলাকায় এই বাসিন্দা স্থানীয় নিগমনগর হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন। পরবর্তীকালে তিনি পুরোদস্তুর রাজনীতির মানুষ হয়ে ওঠেন। ১৯৮০ সাল থেকে বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রে একটানা তিনি জিতে আসছেন। প্রায় আড়াই দশক সাংসদ থাকাকালীন তিনি দল তো বটেই সংসদেও অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে আলোচনার সময় তাঁর উপরেই আস্থা রেখেছে সিপিএম।
এই বর্ষীয়ান সাংসদ লোকসভায় বিভিন্ন কমিটির গুরুত্বপূণর্র্ পদে ছিলেন। লোকসভায় রেলের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। দায়িত্ব সামলেছেন লোকসভার পিটিশন কমিটি ও কমিটি অব পাবলিক আন্ডারটেকিং-র চেয়ারম্যানের পদ। এ বার তিনি লোকসভায় কৃষি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জেলার জন্য বটেই, রাজ্যে রেলের উন্নয়নের জন্য তিনি দীর্ঘ দিন ধরেই দাবিদাওয়া করে আসছিলেন। সংসদেও বামপন্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে তিনি অন্য তরুণ সংসদের তুলনায় বাসুদেববাবুকেই বেশি উৎসাহী দেখা গিয়েছে। কিন্তু গত বার লোকসভা নির্বাচনের প্রচার চলাকালীন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে তাঁকে একদিন বাঁকুড়া মেডিক্যালে ভর্তি থাকতে হয়। অনেকে ভেবেছিলেন এ বার তিনি ভোটে প্রার্থী হবেন না। কিন্তু এ বার রাজ্য রাজনীতির অন্যরকম পরিস্থিতিতে দল তাঁকে ছাড়া আর কাউকে এই কেন্দ্রে ভরসা করতে পারেনি।
বাসুদেবাবুও বলেন, “ডায়াবেটিসের চেকআপের জন্য মাঝে মধ্যে হাসপাতালে যেতে হয় আমাকে। এ ছাড়া শারীরিক অন্য কোনও সমস্যা নেই। প্রতিদিনই ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দলের কাজ করতে হয়। দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রার্থী হয়ে প্রতি ইঞ্চি জমির জন্য লড়াইতে নেমেছি।”
বাসুদেববাবুর সঙ্গেই সংসদে নিয়মিত দেখা যেত পুরুলিয়ার ফরওয়ার্ড ব্লক সাংসদ বীরসিংহ মাহাতোকে। ২০০৬ সালে তিনি পদত্যাগ করায় উপনির্বাচনে সাংসদ হল তাঁর দলেরই নরহরি মাহাতো। তারপর ২০০৯ সালেও পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনিই জয়ী হন। এ বার তাঁর উপরেও ভরসা রেখেছে দল। জেলা বামফ্রন্ট সূত্রে আগাম তেমনটাই খবর ছিল। তৃতীয়বারের জন্য লোকসভা নির্বাচনের প্রার্থী হচ্ছেন নরহরিবাবু। প্রার্থীপদ ঘোষণার পরে আলাদা করে কোনও প্রতিক্রিয়া ছিল না তাঁর। কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে এ দিন বিকেলে তিনি ছিলেন অযোধ্যা পাহাড়ে। পাহাড় থেকে ফেরার পথেই ঘোষণা করার খবর পান। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “আমরা নীতির লড়াইয়ে বিশ্বাসী। নির্বাচনে আদর্শের লড়াই হবে।”
নরহরিবাবুও পেশায় স্কুলশিক্ষক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে ঝালদা ২ ব্লকের জিউদারু উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই অবশ্য ফরওয়ার্ড ব্লকে নাম লেখান। পরে জয়পুর ব্লকের শ্রীরামপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। রাজনীতিক হিসেবে প্রথমে তিনি দলের নোয়াহাতু শাখা কমিটির সম্পাদক, পরে ঝালদা ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক হন। পরে ওই জোনাল কমিটির সম্পাদকও হন তিনি। পরে জেলা কমিটির সদস্যপদ থেকে জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য হন। ২০০৭ সাল থেকে তিনিই পুরুলিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক। পরবর্তী কালে রাজ্য কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ঠাঁই হয় নরহরিবাবুর।
বিষ্ণুপুর লোকসভায় এ বারও সুস্মিতা বাউরিকেই প্রার্থী করেছে সিপিএম। আগে এই কেন্দ্র থেকে তাঁর মা সন্ধ্যা বাউরি সাংসদ হয়েছেন। তবে ২০০৪ সাল থেকে ওই কেন্দ্রের সাংসদ সুস্মিতা। বাঁকুড়া শহরের গোবিন্দনগরের বাসিন্দা সুস্মিতা আইনজীবী। দল এ বারও তাঁকে প্রার্থী করেছে শুনে সুস্মিতা বলেন, “সাংসদ তহবিল থেকে নানা কাজ হয়েছে। সবই গরিব মানুষের স্বার্থে। দলীয় প্রতিশ্রুতি যা থাকে সবই রূপায়ণের চেষ্টা করেছি। এবারও করব।”